বরিশাল নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডস্থ কালীবাড়ি রোডের বিএম স্কুল সংলগ্ন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান কাঞ্চনপার্ক থেকে নিরাপত্তাবেষ্টনী হিসেবে স্থাপিত লোহার ১৫টি গ্রিল চুরি হয়েছে। রাতের আঁধারে সংঘটিত এই ঘটনাকে স্থানীয়রা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
২০১২ সালে প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ নগরবাসীর সবুজায়ন, শিশুদের বিনোদন ও প্রবীণদের হাঁটা–শরীরচর্চার উপযোগী স্থান হিসেবে পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় পার্কটি ‘কাঞ্চন উদ্যান’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। অর্জুন, ঝাউ, নিম, বাদামসহ বহু দেশি–বিদেশি বৃক্ষ রোপণে পার্কটি দ্রুত সবুজে ভরে ওঠে। নিয়মিত হাঁটা ও শারীরিক ব্যায়ামের জন্য অসংখ্য মানুষ এখানে যাতায়াত করতেন। কয়েক বছর আগে কর্তৃপক্ষ পার্কে একজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করলেও বর্তমানে নেই। যার ফলে গত বছরের সরকার পরিবর্তনের পর থেকে পার্কের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ—এখন পার্কটি সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। কিশোর গ্যাংদের উপস্থিতিও বেড়ে গেছে। তাদেরই একটি চক্র গ্রিলগুলো খুলে নিয়ে গেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। গ্রিল চুরির ফলে পার্কটি এখন প্রায় উন্মুক্ত। দেয়াল পেরিয়ে গরু–ছাগল প্রবেশ করে গাছপালা নষ্ট করছে। এতে হাঁটাহাঁটি করতে আসা মানুষজনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ষাটোর্ধ নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা আব্দুল কাদের বলেন, “এক যুগ ধরে এখানে হাঁটছি। এখন মাদকের গন্ধে হাঁটা যায় না। কেউ তাদের কিছু বলতে ভয় পায়। গ্রিল চুরি করে সেই টাকায় তারা আবার মাদক সেবন করছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পার্কটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে।”
পার্কের পাশের দোকানি হাসিনা বেগম জানান, রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ হয়ে গেলে বখাটেরা ভিড় করে। অন্ধকারের সুযোগে আস্তে আস্তে গ্রিল খুলে নেওয়া হয়েছে।”
বরিশাল জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, “এটি নগরবাসীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র ছিল। এখন অপরাধীদের নিরাপদ আড্ডাস্থল। যার ফলে ৭০ ভাগ প্রবীণরা এখন আসেন না। দ্রুত সংস্কার, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ ও পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা জরুরি।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরিবেশবাদী সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, এখানে বিলুপ্তপ্রায় অনেক গাছ রয়েছে। শহরে এমন সবুজ আর কোথাও নেই। সংরক্ষণের জন্য অবিলম্বে পার্ক পুনর্নির্মাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, “কাঞ্চনপার্ক সংস্কার ও চুরি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “নিয়মিত টহল দেওয়া হয়। ঘটনাটির পর নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নগরবাসীর প্রত্যাশা—সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগে কাঞ্চনপার্ক তার আগের প্রাণচঞ্চলতা ও ঐতিহ্য ফিরে পাবে।