নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় মো. সেলিম (৪৫) নামের এক শ্রমিককে রাতের আঁধারে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে রাতভর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনকে আসামি করে তজুমদ্দিন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে নিহতের ভাই মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় মোজাম্মেলের ছেলে আনোয়ার হোসেনকে। মৃত সেলিম চাঁদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষের হাওলা গ্রামের মো. মনতাজের ছেলে।
ঘটনার দুদিন অতিবাহিত হলেও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গত রবিবার (৩০ নভম্বর) বিকালে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিমের মৃত্যু হয়। পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের স্ত্রী রেখা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর শনিবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সেলিম চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি আসার পথে তাকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতন করে গুরুতর অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে যায়। খবর পেয়ে স্বজনরা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানেই বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। সেলিমের হাত, পা, ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ও ক্ষতচিহ্ন ছিল।
অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার কারণে একই এলাকার আনোয়ার হাওলাদার, সিরাজ, রায়হান ও নিরবসহ অন্যান্যরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সূত্র ধরে সেলিম ও আনোয়ারের মধ্যে বিরোধ ছিল। এ কারণে প্রায় দুই মাস আগে আনোয়ার সেলিমকে একটি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে সালিস করে এলাকাছাড়া করেন। পুনরায় গত শনিবার আনোয়ার এলাকায় আসার খবর পেয়েই তাকে বাড়ির দরজা থেকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন আনোয়ার। পরে রাতভর তাকে মারধর করে সকালে রাস্তার পাশে ফেলে রাখেন এবং সেলিম আনোয়ারের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার চালান আনোয়ার। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার রাতে সেলিম তার ঘরে চুরি করতে ঢোকেন। টের পেয়ে তিনি ডাক-চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে গণপিটুনি দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। তার সঙ্গে সেলিমের কোনো শত্রুতা নেই উল্লেখ করে উল্টো অভিযোগ করেন সেলিম চিহ্নিত চোর।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. জাবেদ ইমরান জানান, ভর্তির পর তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার শরীরে ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে। বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। তজুমদ্দিন থানার ওসি মো. মহব্বত খান বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিমের মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সোমবার দিবাগত রাতে নিহতের ভাই ইব্রাহীম বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৬-৭জনের নামে মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।