পাশে নেই মনোনয়নবঞ্চিতরা, বেকায়দায় দলীয় প্রার্থীরা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে। বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে নাম ঘোষণা করার পর প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বঞ্চিতদের অনুসারীরা। আর বঞ্চিত ব্যক্তিরা কোথাও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন, আবার কোথাও নিজেদের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে ভোটের মাঠে অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন ওই পাঁচ আসনের বিএনপির প্রার্থীরা।
দলীয় সূত্র বলেছে, গত ১৭ অক্টোবর বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের প্রায় ৬০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই দিন সবার প্রতি তাঁর বার্তা ছিল—যিনি মনোনয়ন পাবেন তিনি বঞ্চিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোলাকুলি করবেন। আর বঞ্চিতদের নিয়ে প্রার্থী কাজ করবেন। ৩ নভেম্বর বরিশাল জেলার ছয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রাথমিকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপর কয়েক দিন কোনো কোনো আসনে প্রার্থীর পাশে বঞ্চিতদের দেখা গেলেও এখন চিত্র পাল্টে গেছে। বরং কোথাও বিক্ষোভ, আবার কোথাও বঞ্চিতরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। এ অবস্থায় কোনো কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কথা বলেছে। তবে বঞ্চিতদের সাফ কথা, চূড়ান্তভাবে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা মনোনয়নের প্রত্যাশা ছাড়বেন না।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহানকে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে ২১ নভেম্বর আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়েছে। ওই কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বিএনপির ঘোষিত খসড়া তালিকায় যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেই জহির উদ্দিন স্বপন ১/১১-এর সময় জিয়াউর রহমানের পরিবার ও দলকে নিয়ে চরম বিষোদ্গার করেছেন। তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে এই আসনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাঁকে আবার মনোনয়ন দেওয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, তাঁর আসনের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন একলা চলো নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি যখন সংস্কারপন্থী ছিলেন, তখনকার লোকজন নিয়ে এখন নির্বাচন পরিচালনা করছেন।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়া রাজিব আহসানের পাশেও বঞ্চিত প্রার্থীদের দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও বরিশাল-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, ‘প্রার্থী রাজিবের পাশে বঞ্চিতরা নেই, কারণ মনে কষ্ট আছে। আমারও কষ্ট আছে। তফসিল ঘোষণা হোক, তারপর দেখা যাবে।’
বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে মর্যাদার আসন বরিশাল-৫ (নগর ও সদর) আসনে শুরুতে অনেক প্রার্থী ও নেতাকে দেখা গেলেও এখন কেউ কেউ দূরে সরে আছেন। এই আসনে এবারও বিএনপির প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার। এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, এবায়দুল হক চান, আফরোজা খানম নাসরিন তাঁর থেকে দূরে দূরেই থাকছেন। বরং রহমাতুল্লাহর রিকশা মিছিল এবং নাসরিনের গণসংযোগ স্পষ্ট করেছে, তাঁরা এখনো ভোটের মাঠ ছাড়েননি।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলেছি, ‘যেহেতু প্রাথমিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আমি এখনো মনোনয়নপ্রত্যাশী। চূড়ান্তভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে আমি অবশ্যই প্রার্থীর সঙ্গে নেতা-কর্মী নিয়ে থাকব।’
নগর বিএনপির সদস্য এবং বরিশাল-৫ আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আফরোজা খানম নাসরিনও একই রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘উনি (সরোয়ার) কি ১৭ বছর মাঠে ছিলেন? মাঠে ছিলাম আমরা। তফসিল ঘোষণা করুক, ততক্ষণ লড়ব।’
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকে কামান চেয়ে থাকে পিস্তলের আশায়। সামনে জেলা পরিষদ, মেয়র বহু সুযোগ আছে। হয়তো তাঁরা এমন আশায় আছেন।’
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল হোসেনের পাশে নেই বঞ্চিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম রাজন। এ বিষয়ে রাজন বলেন, ‘৩ নভেম্বর দল প্রার্থী ঘোষণার পর আমি আবুল হোসেনকে সমর্থন জানিয়েছি। কিন্তু তিনি আজ পর্যন্ত আমাকে ডাকেননি, ফোন দেননি, কিংবা খোঁজখবরও নেননি। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।’
সার্বিক বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘দল যদি মনে করে, চূড়ান্ত মনোনয়নে পরিবর্তন আসতেও পারে। তবে ত্যাগীদেরই গুরুত্ব দিতে হবে। চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন ঘোষণা করা হলে নেতাদের মধ্যে এ দূরত্ব কমে আসবে।’
