পিরোজপুরে সহস্রাধীক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন , উদ্যোগ নেই পরিত্যক্ত ঘোষণার

এ.এ.এম হৃদয় | ২২:২৬, নভেম্বর ২৬ ২০২৫ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : পিরোজপুরের পুরনো ডিসি অফিস, মহিলা কলেজ ও জেলা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি মিলে এক হাজারের বেশি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। তবু পরিত্যক্ত ঘোষণা বা অপসারণে নেই প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে ভূমিকম্প আতঙ্ক বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর দেড় শতাধিক বছরের পুরনো একটি মহকুমা, যা ১৯৮৬ সালে জেলায় উন্নীত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় জেলার অধিকাংশ সরকারি ভবনই বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পুরনো ডিসি অফিস ভবনটি বহু বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখনো সেখানে দুটি সরকারি অফিস ও ভবনের বেশিরভাগ কক্ষ ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরের টাউন ক্লাব মার্কেটটিও ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘদিন ধরে। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনা এবং সরকারি মহিলা কলেজের চারটি ভবনও। এমনকি হাসপাতালের বিভিন্ন অংশেও ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে। সূত্র জানায়, শহরের ক্লাব সড়কের গোপাল কৃষ্ণ টাউনক্লাব মার্কেট প্রায় ১০ বছর আগে ভবনের ঝুঁকি এড়াতে উত্তরা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক তাদের শাখা সরিয়ে নিয়েছে। তবে অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রম ও ব্যবসা এখনো চলছে। পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের তিনটি একাডেমিক ভবন রয়েছে, যার মধ্যে একটি তিনতলা, একটি চারতলা ও একটি দোতলা ভবন। এ ছাড়া কলেজটির রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক হল ভবন। তবে আবাসিক হলটিসহ কলেজের তিনটি ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। উঠে গেছে দেয়ালের রং, খসে পড়ছে পলেস্তারা। এ ছাড়া ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে। কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান। জেলার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ মহিলা কলেজের এক হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থীর এক হাজার জনকেই পাঠদান করতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দুটিতে। ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক হলে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে প্রতিদিনই আতঙ্কে কাটছে তাদের দিন। এ ছাড়া পিরোজপুর জেলায় ৯৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৫টি ভবনই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব জরাজীর্ণ ভবনে চলছে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম। ফলে তাদের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে। পিরোজপুরের উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আহসান মুন্না, যার অফিস পুরনো ডিসি অফিস ভবনে। তিনি বলেন, এবারের ভূমিকম্প বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে, একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। পিরোজপুরে শতাধিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও সেগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। এ কারণে জীবনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে থাকা ভবনগুলো দ্রুত অপসারণ করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, গণপূর্তের তথ্য মতে আমাদের পিরোজপুরে সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে সহস্রাধিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। গত কয়েক দিনে কয়েকটি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে পিরোজপুরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এসব ভবন দ্রুত পরিত্যক্ত ঘোষণা বা অপসারণ করা হোক। গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) ফাহিম আহমেদ বলেন, এ ভবনগুলো কনডেমনেশন (পরিত্যক্ত ঘোষণা) করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলাউদ্দীন ভূঁইয়া জনী বলেন, এখানে পুরাতন কালেক্টরের ভবনসহ অনেক বিল্ডিং রয়েছে, এগুলো আমরা চেক করব। পুরাতন কালেক্টরেট ভবনটি মূলত স্যালভেজ (পুনরায় ব্যবহার) হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এখানে একটি স্কুল রয়েছে, সেখানে আমরা একটি ভবন প্রস্তাব করেছি। তবে যেগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেগুলো কনডেম (পরিত্যক্ত ঘোষণা) করতে হবে।