সরকারি চাকরি করেও বিএনপি রাজনীতিতে কবির মৃধা, দ্বৈত পরিচয়ে তোলপাড়!

এ.এ.এম হৃদয় | ২২:৪৩, নভেম্বর ২৫ ২০২৫ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের লামছড়ী গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন মৃধা। যিনি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার। সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও কবির হোসেন মৃধা সেই নির্দেশনা অমান্য করে ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতি করছেন। এমনকি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হবেন বলেও তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। মেহেন্দিগঞ্জবাসীর অভিযোগ- কবির হোসেন মৃধা ঠিকমতো ডিউটি করেন না, রোগী পরিবহনেও গাফিলতি করেন। তবু মাস শেষে নিয়মিত বেতন তুলে নিচ্ছেন। সরকারি চাকরি করেও দিনের পর দিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে চালানো ও দায়িত্ব উপেক্ষা করছেন তিনি। তার এমন কীর্তি সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি, ১৯৭৯ অনুযায়ী- সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। কোনো দলীয় পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। মিছিল, সমাবেশ বা ব্যানার ও প্রচার নিষিদ্ধ। তবুও কবির হোসেন মৃধা প্রচারণা চালাচ্ছেন, ব্যানার লাগাচ্ছেন এবং নিজেকে সভাপতির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা সরাসরি শৃঙ্খলা ভঙ্গ। দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয়রা বলছেন, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন হলে তাকে পাওয়া যায় না। জরুরি রোগী পরিবহণেও গাফিলতি করেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক সভা, প্রচার ও প্রচারণায় তিনি সর্বদা সক্রিয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন- চাকরিতে দায়িত্ব পালন না করেও মাস শেষে বেতন তোলেন। আর জনগণের জন্য দায়িত্ব পালন না করে রাজনৈতিক শক্তি দেখান। এটা কি গ্রহণযোগ্য?” কিছু মাস আগে লামছড়ী বাজারে সরকারি খাল দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে কবির হোসেন মৃধার বিরুদ্ধে। প্রশাসনের অভিযানে সেই দোকান উচ্ছেদ করলেও, কর্তৃত্বের খোলস পাল্টানোর এমন দৃঢ় সাহস সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্য রাজনীতির চরম উদাহরণ। সরকারি চাকরি, দায়িত্ব উপেক্ষা, মাসিক বেতন তোলা, প্রকাশ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব সব মিলিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে। এক নাগরিক বলেন- চাকরিতে সরকারি, কাজে তুচ্ছ, রাজনীতিতে প্রকাশ্য এ কী নিয়ম? প্রশাসন কি দেখছে না? নিয়ম অনুযায়ী- সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে এই কর্মকাণ্ড শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু প্রশাসনের নীরবতা এই চরম অব্যবস্থাপনার প্রশ্ন তোলে। চাকরিরত সরকারি কর্মচারী হয়ে একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতির প্রার্থী হওয়া, দায়িত্বে গাফিলতি, মাসিক বেতন তোলা, সব মিলিয়ে কবির হোসেন মৃধার কর্মকাণ্ড নৈতিক ও আইনি বিচারের প্রশ্নে। স্থানীয়রা দাবি করছেন- এ ধরনের দ্বৈত পরিচয় ক্ষমতার অপব্যবহার। দ্রুত পদক্ষেপ না হলে আরও বিপত্তি হবে। অভিযুক্ত কবির হোসেন মৃধা বলেন, আমি অবসরে আছি। তাই রাজনীতি করতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু তার এই বক্তব্য কতটুকু সত্য তা জানতে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, কবির হোসেন মৃধা এখনও কর্মরত রয়েছেন। তিনি রাজনীতি করেন কিনা তা জানা নেই। সরকারি চাকরি করে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম মনজুর-এ-এলাহী বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আইনে বলা আছে সরকারি চাকুরিরত অবস্থায় কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকতে পারবে না। আপনাদের এই তথ্য যদি সত্য হয় তাহলে আমি অবশ্যই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।