বরিশালে এনআইডি জালিয়াত চক্রের প্রধান পরিতোষ গাইন কারাগারে
নিজেস্ব প্রতিবেদক|২২:৩৬, নভেম্বর ২৫ ২০২৫ মিনিট
বরিশালের বানারীপাড়ায় জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে মূল্যবান জমি আত্মসাৎ করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পরিতোষ গাইনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। মঙ্গলবার পরিতোষ গাইনের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর এনআইডি জালিয়াতি করে কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগে বানারীপাড়ার কুন্দিহার গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন মৃধার ছেলে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মৃধা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন— ঝালকাঠি সদর উপজেলার মৃত মতিলাল মন্ডলের ছেলে সুভাষ মণ্ডল ও বানারীপাড়ার মাছরাং এলাকার মৃত ক্ষিতীশ চন্দ্র গাইনের ছেলে পরিতোষ গাইন। মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে, এসএ ১৪৪ নং খতিয়ান ও ৪৫১/৪৫৪ দাগের ৬২ শতাংশ জমির মূল মালিক নিবারণ মালী। তার মৃত্যুর পর নাবালক দুই পুত্র বিজয় ও মাধব মালীর পক্ষে তাদের মা মতিবালা মালী ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে ভূমিটি বাদীর পিতা আব্দুল মতিন মৃধাকে হস্তান্তর করেন। এরপর থেকে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে জমিটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল ও রাজস্ব দিয়ে আসছিল মনিরুজ্জামানদের পরিবার। অভিযোগে বলা হয়, জমিটি বর্তমানে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে ওঠায় আসামি পরিতোষ গাইনের নেতৃত্বে একটি চক্র জাল ওয়ারিশ সনদ, জাল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, ভুয়া এনআইডি কার্ডসহ কৌশলে নথিপত্র তৈরি করে জমিটি আত্মসাৎ করার ফন্দি আঁটে। ভূমি অফিসের অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় এসব জাল দলিলাদি দাখিল করা হয়। ২০২২ সালের ৬ মার্চ ১ নং আসামী সুভাষ মণ্ডল ‘মাধব মালী’ পরিচয়ে বানারীপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে মিউটেশন মামলা (নং ৪৪-বিপি/২০২১-২২) দায়ের করেন। সেখানে মাধব মালীর নামে জাল ওয়ারিশ সনদ এবং নকল অ্যাটর্নিপত্র জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা সরকারি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে জানান—ওই নামে কখনো কোনো ব্যক্তি তাদের এলাকায় বসবাস করেননি।
২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর বাদী ভূমি অফিস থেকে জাল কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করে মামলা দায়ের করেন। বাদী দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে জালিয়াত চক্র প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় ওই জমি দখল করে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) মামলার ২ নং আসামী পরিতোষ গাইনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাদী বলেন—“এটি সুপরিকল্পিত জালিয়াতি। আমাদের পরিবারের বৈধ মালিকানাধীন জমি নানান জাল দলিল তৈরি করে দখল করে। আদালতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” বাদীপক্ষের আইনজীবী মির্জা ইমরান উল্লাহ বলেন—“আসামি পরিতোষ গাইন ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বাদীর জমি দখল করে। মামলার নথিপত্রে জালিয়াতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।” ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।