যে হারে রপ্তানি আয় আসছে তার চেয়ে বেশি হারে আমদানিতে খরচ করতে হচ্ছে। ফলে বড় হচ্ছে বাণিজ্যের ঘাটতি। একই সঙ্গে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চলতি হিসাবের নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি হিসাব ও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায় দেশের বৈদেশিক খাতে চাপ তৈরি হতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদে টাকার মানে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আরও কমে যেতে পারে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রন্তিকে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। সেই হিসেবে ৫৭১ কোটি ২০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার।
প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল’ সেখানে চলতি অর্থবছরে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঘাটতি বা ঋণাত্বক হয়ে গেছে।
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়েছে। গত বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ১৪৮ কোটি ডলার; চলতি অর্থবছরে তা ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রমজান শুরু হওয়ায় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আগে থেকেই এলসি খোলা হয়েছে। এর ফলে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চলতি হিসাব ও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়েছে।
তবে তিনি জানান, সব আমদানি নেতিবাচক নয়। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালও আমদানি হয়েছে, যা পরে পণ্য হিসেবে রপ্তানি বা দেশেই বিক্রি হবে। ফলে ভবিষ্যতে চলতি হিসাব ভারসাম্যে ফিরতে পারে।
তথ্যমতে জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যেটা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। আগের বছরের একই সময়ে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৬ দশকি ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বেড়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিন মাসে ১১ কোটি ৪০ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩১ কোটি ৮০ ডলারে উঠেছে।
তবে আলোচিত দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থায় আছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে বেশি চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৫০ লাখ ডলার; এখন তা (ঋণাত্মক) ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।