বরিশালের রাস্তায় এখন পুলিশের টহল গাড়ি চোখে পড়ে কম। কোনো কোনো দিন পুরো থানার দায়িত্বে থাকে একটি জিপ। তবু বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) বলছে, ‘সেবা থেমে নেই, চেষ্টা চলছে’।
২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিএমপি তখন সীমাবদ্ধ ছিল এক কোতোয়ালী থানায়।
সময়ের সঙ্গে শহরের পরিধি বেড়েছে, বেড়েছে অপরাধের ধরণও। বর্তমানে চারটি থানা- কোতোয়ালী, কাউনিয়া, বন্দর ও বিমানবন্দর রয়েছে। কিন্তু থানার সংখ্যা বাড়লেও সরকারি পরিবহনের চাকা ঘোরেনি।
বর্তমানে বিএমপির সরকারি গাড়ি ৫৮টি, অনুদানসহ গাড়ির সংখ্যা মোট ৮০টি।
এর মধ্যে রয়েছে ১টি এপিসি (জলকামান), ১টি রেকার, ১টি বাস, ১টি ট্রাক, ২৭টি ডাবল কেবিন জিপ ও পিকআপ, ১৭টি অপারেশনাল গাড়ি এবং ৭৭টি মোটরসাইকেল। এই সীমিত যানবাহন দিয়েই টহল, অপরাধ দমন, মিটিং-মিছিল ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। গাড়ির সংকটে পুলিশ সদস্যদের প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। অনেক গাড়ি পুরনো হয়ে গেছে, কিছু আবার বিকল হয়ে পড়ে মাঝপথে।
বিএমপি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক গাড়ি সচল রাখতে কখনো কখনো অন্যটির যন্ত্রাংশ খুলে নিতে হয়।
এক এসআই বলেন, ‘রাতভর টহল দিতে হয়। আগে গাড়ি কম থাকলেও প্রয়োজনে রিকুইজিশন করা যেত। এখন রিকুইজিশনেও সমস্যা। কখনো কখনো পায়ে হেঁটে টহল দিতে হচ্ছে।
উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. শরফুদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে সব যানবাহন সচল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিকল গাড়িগুলো দ্রুত মেরামত চলছে, পাশাপাশি নতুন গাড়ির আবেদন পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় নগরবাসীর মধ্যে বাড়ছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। রাতে টহল কমে গেলে চুরি বা ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থেকে যায়।
নগরের বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘রাতে দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটলে পুলিশ না পেলে মানুষ আতঙ্কিত হয়। গাড়ির সংকট দ্রুত কাটুক, এটাই প্রত্যাশা।’
স্থানীয় রাজনীতিবিদরাও মনে করছেন, পরিবহন ঘাটতি যেন নির্বাচনের সময় নিরাপত্তায় প্রভাব না ফেলে, তা এখন সরকারের দায়িত্ব।
বিএমপি কর্মকর্তারা বলেন, আধুনিক পুলিশিংয়ের মূল চাবিকাঠি হলো দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা। যা নির্ভর করে সচল পরিবহনের ওপর।
পরিবহনের দায়িত্বে থাকা এক সহকারী পুলিশ কমিশনার জানান, প্রতিটি থানা ও বিট এলাকায় অন্তত একটি নির্ভরযোগ্য টহল গাড়ি থাকা দরকার। তাহলে অপরাধ প্রতিরোধ ও জনসেবা দুটোই সহজ হবে।
বিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের নিরাপত্তা ও টহল কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে অতিরিক্ত গাড়ির চাহিদা বিষয়টি হেডকোয়ার্টারে জানানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী, নির্বাচনের আগেই কিছু যানবাহন পাওয়া যাবে।’