গুলশানে অভিজাত বারের সেই রাত: ঘুষি-লাথির পর রাস্তায় ফেলে রাখে ব্যবসায়ীকে
দেশ জনপদ ডেস্ক|১৯:৪২, নভেম্বর ০৪ ২০২৫ মিনিট
গুলশানে ‘ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ’ নামের একটি বারের বাউন্সার ও কর্মচারীদের মারধরে দবিরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী নিহতের মামলায় দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এজাহারনামীয় আসামি বারের নিরাপত্তাকর্মী প্লাবন মিয়া এবং বারের বাউন্সার রাকিব ঢাকার পৃথক দুটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
গত রোববার (২ নভেম্বর) আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত এ দুই আসামি।
একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বারের ব্যবস্থাপক শামীমের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিলেন দবিরুল। একপর্যায়ে দবিরুল শামীমকে একটি থাপ্পড় দেন। পরে তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে দবিরুলকে মারধর করেন। দবিরুল নিচে পড়ে গেলে একজন তার মাথায় লাথি দেন। এর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মিলে দবিরুলকে সেখান থেকে বারের নিচে রাস্তায় ফেলে আসেন।
এ প্রসঙ্গে গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বারের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা দবিরুল ইসলামকে মারধর করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আমরা কাজ করছি। গত এক সপ্তাহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
জবানবন্দিতে আসামি বাউন্সার রাকিব বলেছেন, ‘গত ১৫ অক্টোবর (১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত) রাতে তিনি বারের ভেতরে ডিউটিতে ছিলেন। রাত আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে বারের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ডিউটিতে থাকা কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে দেখেন— তাদের পূর্ব পরিচিত কাস্টমার তোফাজ্জল হোসেন তপু আরেক কাস্টমার দবিরুলকে মারছিলেন। পাশেই বারটির ম্যানেজার শামীম আহম্মেদ ওরফে সুমন উপস্থিত ছিলেন। শামীমের নির্দেশে তারা দবিরুলকে ধরে বারের নিচের গেটের বাইরে নামিয়ে দেন এবং উপরে চলে আসেন।’
‘পরে তিনি জানতে পারেন, তাদের সিকিউরিটি ইনচার্জ জামিল ও নিচে ডিউটিতে থাকা নিরাপত্তাকর্মী তামিমের সঙ্গে দবিরুলের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হয়। তার কিছুদিন পর তিনি মারা যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, জামিল লোকটিকে ঘুষি মারেন এবং জোরে ধাক্কা দিলে রাস্তার ওপর চিৎ হয়ে পড়ে যান। তখন জামিল ও নিচে ডিউটিতে থাকা তামিম তাকে বেশ কয়েকটা লাথি মারেন। আরেক নিরাপত্তাকর্মী প্লাবন লোকটির ডান পা, জামিল লোকটির বাম পা এবং রাজু ডান হাত ও কাউসার বাম হাত ধরে চেংদোলা করে বারের গেটের সামনে নাফি টাওয়ারের পেছনে রাস্তার ওপরে ফেলে আসেন।’
অপরদিকে আসামি প্লাবন জবানবন্দিতে বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে তিনি বারের নিচে রাস্তার ওপর পার্কিং এলাকায় রাখা গাড়িগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাত অনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় বারের ভেতরে বিল নিয়ে ঝামেলায় তপু নামের এক কাস্টমারের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটায় বারের ম্যানেজার শামীমের নির্দেশে বারের মধ্যে কর্মরত থাকা বাউন্সার রাকিব, রুবেল ও লিটনরা দবিরুলকে নিচে নিয়ে আসে। পরে গেটের বাইরে রেখে তারা আবার ওপরে বারের ভেতরে চলে যান।’
‘পরবর্তী সময়ে দবিরুল বারবার বারের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় সিকিউরিটি ইনচার্জ জামিল তাকে পুনরায় বারে ঢুকতে বাধা দিলে দবিরুলের সঙ্গে তার হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে জামিল স্যার লোকটিকে ঘুষি মারেন এবং জোরে ধাক্কা মারেন। ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকটি রাস্তার ওপর চিৎ হয়ে পড়ে যান। তখন জামিল স্যার ও নিচে ডিউটিতে থাকা তামিম তাকে বেশ কয়েকটা লাথি মারেন। লোকটি অজ্ঞান হয়ে গেছে বুঝতে পেরে প্লাবন লোকটির ডান পা, জামিল বাম পা এবং রাজু ডান হাত ও কাউসার বাম হাত ধরে চেংদোলা করে বারের গেটের সামনে নাফি টাওয়ারের পেছনে রাস্তার ওপরে নিয়ে যান। পরে তারা তার চোখে-মুখে ও মাথায় পানি দেন। ঘণ্টা দুয়েক পর দবিরুলের ছেলে এসে তাকে নিয়ে যান। পরে জানতে পারেন, ওই ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। তার কিছুদিন পর লোকটি মারা যান।’