বিএম কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীর অনশন

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২০:১১, অক্টোবর ২৭ ২০২৫ মিনিট

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ফেরদৌস রুমি নামের শিক্ষার্থী। আজ সোমবার দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁর অনশন অব্যাহত ছিল। শিক্ষার্থীরা বলেন, রোববার বেলা দেড়টা থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রুমি অনশন শুরু করেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁর দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। অনশনকারী ফেরদৌস রুমি বলেন, ‘৩২ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজে ২৪ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও দাবিদাওয়ার বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা এক মাসের বেশি সময় ধরে নানা কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমি আমরণ অনশনে বসেছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।’ অনশনস্থলে অনেক শিক্ষার্থী সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিএম কলেজে মোট ২২টি বিভাগ আছে। বর্তমানে ২২টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। কিন্তু অনুমোদিত ১৯৯টি শিক্ষকের পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৬৫ জন। সরকারি মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ১২ জন শিক্ষক থাকা উচিত। কিন্তু বিএম কলেজের কোনো বিভাগে তা পূরণ হয়নি। ফিন্যান্স বিভাগে শিক্ষক মাত্র দুজন আর মার্কেটিং বিভাগে একজন। ফলে অনেক বিভাগে তিন-চারজন শিক্ষক দিয়েই পুরো কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার ছাত্রাবাসে থাকতে পারেন। ছেলেদের জন্য তিনটি এবং মেয়েদের জন্য একটি আবাসন আছে, যেখানে আসনসংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১৫০টি। সেখানে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। অন্যদের থাকতে হয় বাইরের মেসে, যা ব্যয়বহুল ও অনিরাপদ। চারটি হলের মধ্যে তিনটি হলও ঝুঁকিপূর্ণ। ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কলেজের বাস মাত্র তিনটি। শিক্ষকস্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন–ঘাটতি, পরিবহন সমস্যা—সব মিলিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনশনে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী আকবর মোবিন বলেন, ২৪ বছর ধরে ছাত্র সংসদ না থাকায় কলেজটি পাহাড়সম সমস্যায় জর্জরিত। পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় রাজনীতিতে নেতৃত্বের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৮৮৯ সালে বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ছাত্র সংসদ গঠিত হয় ১৯৫২-৫৩ শিক্ষাবর্ষে। সর্বশেষ ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সেন্টু-বাদল-নেয়ামুল পরিষদ বিজয়ী হয়েছিল। এরপর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। দাবির বিষয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ শেখ মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। দ্রুত বাকসু নির্বাচনের তারিখ জানানো হবে।