ত্যাগ, বিতর্ক ও প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২৩:১৯, অক্টোবর ২৬ ২০২৫ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্যবহিষ্কৃত সদস্য সচিব কামরুল হাসান সোহাগ নামটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই কর্মী রাজপথের আন্দোলন থেকে শুরু করে দলীয় কর্মসূচির প্রতিটি পর্যায়ে ছিলেন সক্রিয়। ফ্যাসিস্ট আমলের গত ১৭ বছরে তার বিরুদ্ধে ৭৮টি মামলা হয়, যার মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ২১৯০ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে যা বছর হিসেবে প্রায় ৬ বছরের সমান। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর তিনি বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। এখনও তার বিরুদ্ধে চলমান ৩১টি মামলায় তিনি জামিনে আছেন। চলতি বছরের গত অক্টোবর মাসে সোহাগ-সাদৃশ্য এক ব্যক্তির ইয়াবা সেবনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে স্থানীয় অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে সোহাগকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ভিডিওকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ওসমান গনি স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ১০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সোহাগকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও সোহাগ সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন এবং ভিডিওটির ব্যক্তিটি তিনি নন বলে জানান, তবুও দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। সত্যতা প্রমাণে সোহাগ বরিশালের কয়েকজন কম্পিউটার ভিডিও বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। তাদের বিশ্লেষণে জানা যায়, ভিডিওর ব্যক্তিটি কামরুল হাসান সোহাগ নন, বরং তার সাদৃশ্য অন্য কেউ। তারা নিশ্চিত করেছেন যে এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি ও প্রচারিত হয়েছে। এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ খান বলেন, “সোহাগ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা। তিনি নেশায় জড়িত এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।” উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সোহাগ আমার সহকর্মী। ভিডিওটি তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে করি।” বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নিজামুর রহমান নিজামও সোহাগের নিষ্ঠা ও ত্যাগের প্রশংসা করে জানান, সোহাগ কখনোই কোন প্রকার নেশার সাথে যুক্ত ছিলেন বলে তার জানা নেই। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক ওসমান গনি বলেন, “সিনিয়র নেতাদের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে যদি সোহাগ প্রমাণ করতে পারেন যে ভিডিও তার নয়, এবং তিনি আবেদন করেন তাহলে তার পদের বিষয়ে নতুন করে বিবেচনা করা হবে।” এমন অভিযোগের বিষয়ে কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, “বুঝতে শেখার পর থেকেই এই দলের রাজনীতির সঙ্গে আছি। কোনোদিন নেশা করিনি। কিছু ব্যক্তির মতবিরোধ আমার পুরো ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি হবে, তা ভাবিনি। আল্লাহর বিচার একদিন হবেই। দলীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “আমরা কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে নই। তবে আমি বিশ্বাস করি, দল একদিন সত্যটি জানবে এবং আমার ওপর হওয়া অন্যায় সংশোধন করবে।” ত্যাগ, কারাভোগ ও অনিশ্চয়তায় ভরা কামরুল হাসান সোহাগের রাজনৈতিক জীবন আজ প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এখনো অনেক নেতা-কর্মীর বিশ্বাস তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ভিডিওর সত্যতা প্রমাণ এবং দলীয় পুনর্বিবেচনার পর হয়তো তার রাজনৈতিক জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। তবে আপাতত তিনি অপেক্ষায় আছেন দলের ন্যায়বিচার ও আস্থার।