ত্রিরত্নের দুর্নীতিতে জর্জরিত বরিশাল সোনালী ব্যাংক

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২১:০৯, অক্টোবর ২২ ২০২৫ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল সোনালী ব্যাংকের সাবেক বিতর্কিত জিএম গোপাল চন্দ্রের পথেই হাটছেন নবাগত জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোঃ মাহমুদুল হক। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কী পয়েন্টে আশির্বাদপুষ্ট দোসরদের পদায়ন আর অন্য পন্থীদেরকে দেওয়া হয়েছে অজপাড়া গাঁয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানে সারাদেশ মুক্ত হলেও যেন বরিশাল সোনালী ব্যাংক রয়ে গেছে দোসরদের অধিনেই। বর্তমান জিএম এর একান্ত সহযোগি হিসেবে কাজ করছেন পিরোজপুর অঞ্চলের বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ডিজিএম বিভাষ চন্দ্র হালদার। এ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের পেশাদার কর্মকতা কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সোনালী ব্যাংকের সার্কুলারে একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি না থাকার বিষয়টি উল্লে থাকলেও বরিশালে কিছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তা পরিপালন হচ্ছেনা। জিএম অফিস ও প্রিন্সিপাল (ওয়েস্ট) অফিসে বিপুল চন্দ্র পাল, অসীম কুমার বৈরাগী, জান্নাতুল ফেরদৌস, মিতুল আক্তার, জাহিদ হাসান সহ আরো অনেক কর্মকর্তাদের তিন বছরের বেশি পার হলেও তাদেরকে রদবদলের কোন উদ্যোগ নেই। তাছাড়া ফ্যাসিস্ট জিএম গোপাল চন্দ্র বদলীর সময়ে তাকে জিএম অফিসের একটি দামী ল্যাপটপ দিয়ে দেন নবাগত জিএম মাহমুদুল হক। বরিশালে যোগদানের কিছুদিন পর থেকে প্রায়ই অফিসের গাড়ি নিয়ে স্বপরিবারে কুয়াকাটা, পেয়ারা বাগান, শাপলা বিল ও নিদ্রার চর সহ বিভিন্ন স্পটে বিনোদনে যান। তাছাড়া জিএম অফিসেই থাকেন পুরো পরিবার সহ। এমনকি ফ্রি এসি ও নিষিদ্ধ হিটার ব্যবহার করেন মাহমুদ। তার আরেক অনুসারী ডিজিএম বিভাষ চন্দ্র তার স্ত্রী ছেলে সহ প্রায় দুই বছর যাবত ব্যাংকের এসি ব্যাবহার করে ফ্রী থাকছেন। ১০ হাজার টাকারও বেশি মূল্যমান মাসিক ভাড়ার এই রুমগুলো এখন যেন তাদের নিজস্ব বাসাবাড়ি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ফ্যাসিস্টের দোসর ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি ইফতিখার মাহমুদ সোহেল একটানা ১৫ বছর শহর অঞ্চলে চাকরী করার পর ঝালকাঠি কোর্ট বিল্ডিং এ পোস্টিং হয়। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে বর্তমান জিএম মোঃ মাহমুদুল হকের সাথে টাকার বিনিময়ে আবার প্রিন্সিপাল অফিস বরিশাল ওয়েস্ট পদায়ন করা হয়। ক্যাডেট কলেজ শাখার ক্যাশ ইনচার্জ এবং উজিরপুর শাখার ক্যাশ ইনচার্জের মধ্যে একটা বদলী অর্ডার হওয়ার পরে আবার সেই অর্ডার বাতিল করে টাকার বিনিময়ে খানপুরা শাখার এক কর্মকর্তার সাথে ইন্টারচেইঞ্জ করেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সবচেয়ে অলোচিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্যতম নেতা মোঃ মাইনুল ইসলাম, অমল চন্দ্র দে, মাসুদ পারভেজ, সাব্বির মাহমুদ, কাজী মনির সহ আরো অনেক কর্মকর্তারা বর্তমান জিএম এবং ডিজিএম বিভাষ চন্দ্র হালদারের ছত্রছায়ায়  দীর্ঘদিন ধরে শহর অঞ্চলে সুবিধাজনক স্থানে পোস্টিং নিয়ে আছেন। প্রিন্সিপাল অফিস ওয়েস্টের মিতুল আক্তার চার বছর পিও ওয়েস্টে থাকার পরে বরিশাল কলেজ রোড শাখায় ট্রান্সফার হয়, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে মিতুল আক্তারকে আবার পিও ওয়েস্টেই পদায়ন করা হয়। রাতের ভোটের জাতীয় নির্বাচনে অর্থ কেলেংকারীতে অভিযুক্ত মোঃ সাইদুর রহমানকে টাকার বিনিময়ে বরিশাল করপোরেট শাখায় যুগ্ম জিম্মাদার সাধারণ এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অপরদিকে পটুয়াখালী ডিজিএম সেলিম হায়দারের দাপটে কোনঠাসা সাধারন কর্মকর্তারা। আর্থিক কেলেংকারীতে জড়িত বিশ্বজিতকে তার পছন্দ মত জায়গায় পোস্টিং দিয়েছেন। বরগুনার আমতলী শাখার ম্যানেজার জুলফিকার বিন খালেককে শাখা ব্যবস্থাপকের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কলাপাড়া বন্দর শাখায় বদলী করা হয়। পটুয়াখালী অঞ্চলের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিএম সেলিম হায়দার প্রায়ই যখন শাখা পরিদর্শনে যান তখন শাখা থেকে ১০ হাজার টাকার খাম না দিলে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি এবং ম্যামো প্রদানের হুমকি দেন। নিজের বিরূদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে ইফতিখার মাহমুদ সোহেল বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি। কর্তৃপক্ষ তাদের প্রয়োজনে আমাকে ১৫ দিনের মাথায় প্রিন্সিপাল অফিসে নিয়ে আসেন। এখানে কোন টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি। পটুয়াখালীর ডিজিএম সেলিম হায়দার বলেন, আমি ব্রাঞ্চ পরিদর্শনে গিয়ে কোন টাকা নেইনা এবং কোথাও খাওয়া দাওয়া করিনা। আর ব্যাংকের স্বার্থে কাউকে মেয়াদের আগে বদলী করার এখতিয়ার আমাদের আছে। ডিজিএম বিভাষ চন্দ্র হালদার বলেন, আমি ও আমার ছেলে যে রুমটায় থাকছি সেটা যদিও আমার জন্য বরাদ্দ নয়। তবে কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারন করলে আমি পরিশোধ করবো। তাছাড়া বদলী পোস্টিং এর সাথে আমি জড়িত নই। বরিশাল সোনালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোঃ মাহমুদুল হক সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বদলীর সাথে টাকা পয়সা লেনদেনের কোন সম্পর্ক নেই। যাদেরকে যেখানে দেওয়া হয়েছে তা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই হয়েছে। আমি অফিসের গাড়িতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেলেও তা আমার এরিয়ার বাইরে যাইনি। কেননা কুয়াকাটা, উজিরপুর সহ এসব এরিয়া আমার কর্ম এলাকার আওতায়। অফিসে যে রুমে আমি থাকি সেটা জিএম এর জন্যই বরাদ্দ। ডিজিএম বিভাষ সাহেব যে রুমে থাকেন সেটা তিনি অনেক দিন আগ থেকেই থাকছেন, যদিও তার জন্য সেটা বরাদ্দ নেই। আর পূর্বে জিএম সাহেবকে যেই ল্যাপটপটি দেওয়া হয়েছে সেটা অন্য একটি ল্যাপটপ। অফিসেরটি এখনো আমি ব্যবহার করছি।