বরিশালের ৬টি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি!

এ.এ.এম হৃদয় | ১৬:৫১, অক্টোবর ২১ ২০২৫ মিনিট

ত্রয়োদশ নির্বাচনের চূড়ন্ত দিনক্ষণ এখন পর্যন্ত নির্ধারন না হলেও এই ভোটযুদ্ধে বিএনপির ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে অংশ নিতে বরিশাল জেলার ৬টি আসনে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি জোরালো প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ দলীয় পদপদবি বিহীন অনেকে দলটির মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে রয়েছেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সরকার নির্বাচন করার সম্ভব্য সময় ঘোষণা দেওয়ার পরে পর্যায়ক্রমে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিএনপির হাইকমান্ডে বিভিন্ন মাধ্যমে নানা লবিং ও তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন বাগানোর এই প্রতিযোগিতায় যে যার মত অংশ নিতে যাওয়ায় বিভাজিত বরিশাল বিএনপিতে বেড়েছে অন্তর্কোন্দল, যা নিয়ে রীতিমত বিব্রত লন্ডনে অবস্থানরত নেতা তারেক রহমানসহ দলের হাইকমান্ড। স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বরিশালের ৬টি আসনের প্রতিটিতে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন প্রত্যাশী, যারা ত্রয়োদশ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এবং তারা গত ৫ আগস্টের পর থেকে প্রার্থিতার বিষয়টি কেন্দ্রকে জানান দিয়ে মাঠে থেকে জনসমর্থন আদায়ে সংসদীয় আসনগুলো চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ডে চলছে জোর লবিং। জানা গেছে, ত্রয়োদশ নির্বাচনে বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে চাইছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী আব্দুস সোবাহান এবং বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে সংসদীয় আসনের জনগণের মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের মেলে ধরতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। এবং তাদের প্রার্থিতার বিষয়টি ইতিমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ডও অবগত আছেন। অনুরুপভাবে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, মোহাম্মদ দুলাল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশক সহ-সম্পাদক কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদ মাহামুদ জুয়েল। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নুল আবেদীন। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। বরিশাল-৫ (সদর) আসনে ধানের শীষ প্রতিক চাইছেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ এবং এবায়েদুল হক চাঁন। এছাড়াও প্রার্থীর তালিকায় আছেন সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন এবং মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হতে চান বরিশাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর শিকদার বাদল। বরিশালের প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই ছড়াছড়িতে স্থানীয় বিএনপিতে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে গ্রুপিং এবং অভন্তরীণ বিরোধ। এই বিরোধ বর্তমানে এতটাই প্রকট যে শীর্ষস্থানীয় নেতারা একে অপরের মুখ দেখাদেখিতো দুরের কথা, কখনও কখনও বাকযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ছেন। সূত্র নিশ্চিত করে, মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের একে অপরের সাথে বিরোধে না জড়াতে অনেক আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই নির্দেশনা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, বরিশালের ৬ টি আসনে যে অর্ধশত মনোনয়ন প্রত্যাশী তা খোদ তারেক রহমানও অবগত রয়েছেন। তার নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি আসনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে বৈঠক করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। নিশ্চিত হওয়া গেছে, বৈঠকের পরেই বরিশাল-১, ৩ এবং ৪ সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জহির উদ্দিন স্বপন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন এবং রাজিব আহসানকে গ্রিন সিগনাল দিয়ে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। তবে এই তিনটি আসনের বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এ খবর স্রেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এনিয়ে মনোনয়প্রত্যাশীদের কর্মী-অনুসারীরা তর্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে হাইকমান্ড বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মর্যাদাপূর্ণ বরিশাল-৫ সদরসহ বাকি তিনটি আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের কর্মী-অনুগতদের মধ্যে নানান আলোচনা শোনা যায়। এই তিনটি আসনে অন্তত ৩০ জনের বেশি ব্যক্তি ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী রয়েছেন। বরিশালের ৬টি আসনে ৫০ জনের বেশি সংখ্যক প্রার্থী নিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপির হাইকমান্ড চিন্তিত। এই তথ্য নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, বরিশালের ৬ সংসদীয় আসনে অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি বিএনপির শীর্ষনেতৃত্ব পর্যবেক্ষক করছেন। এবং অনেককে ডেকে নিয়ে তাদের মতামতও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছড়াছড়িতে মোটেও বিচলিত নয় বিএনপি হাইকমান্ড। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল। সেক্ষেত্রে এ দল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রার্থীও বেশি। তবে দল থেকে প্রতিটি আসনের একক প্রার্থী ঘোষণার পর এখন যে গ্রুপিং দেখছেন তা দেখা যাবে না। আমার ধারণা, কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনেই সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তবে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের ক্ষতি করবে না মন্তব্য করে এই নারী নেত্রী বলেন, এই মুহূর্তে দেশের স্বার্থে প্রয়োজন সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন। ওই নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে সাধারণ ভোটাররা। তারাও দীর্ঘদিন তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারেননি। আমরা আশা করছি, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ ভোটাররা তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে।’