৪ বছরের শিশুকে নির্যাতন, অভিযোগ বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২২:৪১, অক্টোবর ০৫ ২০২৫ মিনিট

ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি এলাকায় চার বছরের শিশু রাইসাকে অমানবিকভাবে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার বাবা রাকিব হোসেন এবং সৎ মা কলি আক্তারের বিরুদ্ধে। গত বুধবার (১ অক্টোবর) রাকিবের নিজ বাসায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। শিশুটিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান- রাইসার মাথার ডান পাশে গুরুতর আঘাত রয়েছে এবং তার হাতের একটি হাড় ভেঙে গেছে। পরে গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) রাইসার নানা আব্দুস সত্তার হাওলাদার বাদী হয়ে রাকিব ও কলিকে আসামি করে ঝালকাঠি সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রাইসার খালা শাহনাজ বেগম জানান, তার ছোট বোন সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে রাকিবের বিয়ে হয় ২০২০ সালে। কিন্তু দাম্পত্য জীবন ভালো যাচ্ছিল না। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুমাইয়ার মৃত্যু হয়। তখন রাইসার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। এরপর থেকেই রাইসা খালার কাছেই বড় হচ্ছিল এবং খালাকে 'মা' বলে ডাকত। বিষয়টি রাকিব মেনে নিতে পারতেন না। মাঝে মাঝে মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন, আবার কিছুদিন পর খালার কাছে দিয়ে যেতেন। প্রতিবেশী লিজার মা জানান, রাকিবের দ্বিতীয় স্ত্রী কলি রাইসাকে বাড়িতে রাখতে চাইতেন না। এ নিয়ে রাকিব ও কলির মধ্যে কথাকাটাকাটিও হতো। খালার বাসায় কথা বলার সময় রাইসা নিজেও জানায় তার বাবা তাকে মেরেছে। শাহনাজ বেগমের অভিযোগ, ১ অক্টোবর রাকিব ও কলি মিলে রাইসাকে মারধর করে। এতে শিশুটির মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। পরে তিনি রাকিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে রাকিব প্রথমে ফোন ধরেননি। পরে বলেন, মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন। হাসপাতালে গিয়ে শাহনাজ দেখতে পান, রাইসার চোখে রক্ত জমে আছে এবং মাথা ও চোখ ফুলে গেছে। এরপর রাকিব শিশুটিকে তার কাছেই রেখে যান। ২ ও ৩ অক্টোবর রাইসা খালার বাসায় ছিল। ৪ অক্টোবর খালা শাহনাজ শিশুটিকে নিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে বিষয়টি জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নেয় এবং রাইসাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রাইসার নানি কহিনুর বেগম বলেন, আমার নাতনিকে এমনভাবে মারা হয়েছে সে এখনো ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে। চোখ ফুলে গেছে, কাওকে দেখলেই ভয় পেয়ে যাচ্ছে। বাবার নাম শুনলে ভয়ে কাঁপছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। অভিযোগের বিষয়ে রাইসার বাবা রাকিব হোসেন বলেন, রাইসা খালাকে ‘মা’ বলে ডাকায় কষ্ট পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি তাকে মারিনি। সে বাথরুমে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি ধানসিঁড়ি পরিবহনে কন্ডাকটর হিসেবে কাজ করি। মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে খালার কাছে রেখে খুলনায় কাজে এসেছি। এখানে এসে দেখি আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। রাইসার নানা আব্দুস সত্তার হাওলাদার অভিযোগ করেন, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর এখনও তা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। পুলিশ শুধু খোঁজখবর নিচ্ছে। ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। আমি নিজে ও পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলেছি। তদন্ত অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।