বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ৩ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে ৬ জন নেওয়ার চেষ্টা

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২০:২৭, সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৫ মিনিট

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, সমাজবিজ্ঞান এবং মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ এবং মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একজন করে প্রভাষক চাওয়া হলেও প্যানেল করে দুজন শিক্ষক নেওয়া হচ্ছে।

উপাচার্যের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর ৭ বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড শেষ হয়। এর মধ্যে মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট এবং মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ে গত ৭ জুলাই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একজন করে প্রভাষক চাওয়া হয়। কিন্তু সিলেকশন বোর্ডে দুজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য প্যানেল করে প্রতি বিষয়ে তিনজন তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি বিষয়ে দুজনকে প্রভাষক হিসেবে চূড়ান্ত করবে সিন্ডিকেট।

বিষয়টি উল্লেখ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘লিংকার্স ইন বরিশাল ইউনিভার্সিটি’তে গত মঙ্গলবার রাতে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ‘ছাত্রদলের হামিম, রেজা, কাইয়ুম তালুকদার তিনজন একত্রে উপাচার্যকে মৃত্তিকা, ম্যানেজমেন্ট আর মার্কেটিংয়ের বোর্ডে পছন্দের ক্যান্ডিডেটকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে।’ এরপরই ওঠে সমালোচনার ঝড়।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদল নেতা রেজা শরিফের নেতৃত্বে ওই রাতে উপাচার্যের সঙ্গে কয়েকজন দেখা করেন। তাঁরা দুজনকে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য তদবির করেন। ছাত্রদলের যে দুজনকে নিয়ে কথা উঠেছে, তাঁরা হলেন ববি ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভির রহমান তুলিব মার্কেটিং বিষয়ে এবং মেহেদী হাসান ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জন্য। তুলিব মার্কেটিং এবং মেহেদী ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, তাঁরা উপাচার্যের কাছে বিগত সময়ে হামলার বিচার চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্যকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছড়াচ্ছে, তারা পারলে প্রমাণ দেখাক।

ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল খান বলেন, ‘মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় তুলিবকে ঠেকাতে একটি পক্ষ লেগেছে; বরং মো. শাহিনুর রহমান নামক একজনকে নিয়োগ দিতে ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উঠে পড়ে লেগেছেন। সমাজবিজ্ঞানের দুটি মেয়ে সুমাইয়া ও ফারজানাকে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন ওই বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ডিন। তাঁরা নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ভুলের কারণে বিজ্ঞপ্তিতে একটি পদ উল্লেখ করলেও প্যানেল অনুসারে সিন্ডিকেটে দুজন নিয়োগ দেওয়া হবে। আর রাজনৈতিক চাপের বিষয়টি ববি কর্তৃপক্ষ উড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি; বরং তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞাসার পরামর্শ দিয়েছেন।

ববির মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রভাষক পদে দুজনকে নিয়োগের কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে হয়েছে। প্রার্থীদের তিনজনকে প্যানেলে রাখা হয়েছে।

একই কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল ভুল হয়েছে। দুইটা পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুইটার স্থলে একটি চাওয়া হয়েছে। এ জন্য সিন্ডিকেট প্যানেল থেকে যোগ্য দুজনকে প্রভাষক হিসেবে চূড়ান্ত করবে।’