ডাকসুর ফল রাজনীতির নির্বাচনী গ্রামার হিসেবে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে
এ.এ.এম হৃদয়|১৯:১৬, সেপ্টেম্বর ১২ ২০২৫ মিনিট
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, জনআকাঙ্ক্ষাকে যদি আমরা রিড করতে না পারি, সময়কে যদি রিড করতে না পারি, ৯১ অথবা ২০০১ সালের মানদণ্ড দিয়ে যদি ২০২৫ সালকে পড়তে চাই, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ভুল হবে। ডাকসুর নির্বাচনটি আমাদের সামনে আগামী দিনের রাজনীতির একটি নতুন নির্বাচনী গ্রামার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের হলরুমে আয়োজিত ‘বরিশালের উন্নয়ন ও সমসাময়িক বিষয়’ নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিজয়, জামায়াত-শিবিরের উত্থান, মৌলবাদ বা দক্ষিণপন্থিদের জয় হিসেবে ব্যাখ্যার যে চেষ্টা চলছে আমি মনে করি, এটা তরুণদের সঠিকভাবে না বোঝার সমস্যা। যেভাবে আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থান বুঝতে পারেনি, সেভাবেই বিএনপিসহ অনেক বাম ও বুদ্ধিজীবীও ডাকসুকে বুঝতে পারছে না। আমরা যেন কেউই ৯১, ৯৬, ২০০১ সালের ম্যাট্রিক্স দিয়ে এখনকার সময়কে না মাপি। করলে সবাই ভুল করব। কারণ, এটা একেবারে নতুন রাজনৈতিক ম্যাট্রিক্স আগামী দিনের রাজনীতির জন্য।
আরও বলেন, নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ হতে হয় তবে তা শুধু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থাকলেই হবে এই চিন্তা যারা করে, ডাকসু নির্বাচন ইতোমধ্যে সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু জগন্নাথ হলের ভোটের গ্রামার বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য দল এবং প্রার্থীরা আছে এবং তারা জামায়াত-শিবিরকে ভোট দেবে না। ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে জামায়াত-শিবির ভোট পেয়েছে এমন বিশ্লেষণ হবে সম্পূর্ণ ভুল। অনেকগুলো ‘না ভোট’ শেষ পর্যন্ত শিবিরের প্যানেলে জমা হয়েছে, তার মানে এই না যে ভোটগুলো শিবিরেরই ছিল। সুতরাং শিবিরকেও মাথায় রাখতে হবে, এত খুশি হওয়ার কিছু নেই।
ট্যাগিং প্রবণতা নিয়ে তিনি বলেন, তুমি জানো আমিও জানি, সাদিক কায়েম পাকিস্তানি, এই স্লোগান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা ২০২৪-এর আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তারা সবাই সাদিক কায়েমকে চেনেন। তারা একসাথে আন্দোলন করেছেন। হঠাৎ করে তাকে পাকিস্তানি বলা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
অপরদিকে, ফরহাদ ছেলেটা পরিচিত ছিল না, ওর প্রার্থীতা বাতিলে হঠাৎ করে এক সপ্তাহ আগে একটা রিট করছে, যা করে ওকে জাতীয়ভাবে পরিচিত করিয়ে দেয়া হয়েছে। সে কিন্তু ফেবারিট ক্যান্ডিডেট ছিল না। তারপর বাম বলায়সহ কিছু বিষয়টি নিয়ে কিছু জাতীয় পত্রিকার ডেলিভারিটলি কিছু অজনপ্রিয় প্রার্থীকে নিয়ে প্রথম পাতায় কালারফুল তিন কলাম, চার কলামের নিউজ করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে তাকে অলরেডি ভিপি বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। অথচ সে ব্যাপক ভোটে সে হেরেছে।
ফুয়াদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট জায়গায় সাড়ে ছয় শত সাংবাদিক ডাকসু নির্বাচন কভার করেছে। প্রতিটি বুথে সিসি ক্যামেরা ছিল, এলইডি স্ক্রিনে খোলামেলা ফলাফল দেখানো হয়েছে। এখানে ৮০-এর দশকের মতো ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল এমন গুজব ছড়িয়ে বিশ্বাস করানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ভিপি একটি ছাত্রী হলে ঢোকার চেষ্টা করলে মেয়েরা নিজেরাই তার প্রতিবাদ করেছে। যদি কেউ বলে ভোট চুরি হয়েছে, তখন পাল্টা প্রশ্ন এসেছে আপনার দলের মেয়েরা কোথায় ছিল? দুই নাম্বারি চক্করের রাজনীতি এখন আর চলবে না। এখন যদি আপনার মধ্যে ন্যূনতম স্বচ্ছতা, ভদ্রতা, সততা না থাকে তাহলে আপনি ঠিকাদারির রাজনীতি দিয়ে চলতে পারবেন না। ঠিকাদারির পলিটিক্স ইজ ডেথ। ৭১ ব্যবসা, ২৪ ব্যবসা, চেতনা ব্যবসা, কেনাবেচার রাজনীতি দিয়ে কেউ আর চলতে পারবে না।
ভদ্রতাও বিনয়ীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পলিটিক্সে স্বচ্ছ হতে হবে। যিনি ভদ্র, বিনয়ী, যার কথা ও কাজে মিল রয়েছে, যাকে মানুষ মনে করে দেশের জন্য উপকারী তাকেই মানুষ ভোট দেবে। তরুণরা আর শুধু মার্কা দেখে বা দল দেখে ভোট দেবে না। ডাকসু নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে এটা আমাদের কনক্লুশন, এখানে কোনো ইসলামপন্থীর বিজয় হয়নি। জামায়াত-শিবিরের মাধ্যমে দেশে কোনো বড় ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে এই আশঙ্কাও অবাস্তব। বরং এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা দেখেছি, চলমান রাজনৈতিক কালচার ফেল করেছে।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরও বলেন, দেশ কিন্তু শান্ত হয়নি। আমরা এখনো ভলকানোর ওপর বসবাস করছি। কেউ যদি মনে করেন ফেব্রুয়ারির পরে দেশ সুইজারল্যান্ডে পরিণত হবে জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। যেকোনো সময় এই দেশে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, জর্জিয়ার মতো পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তরুণরা এখন অনেক বেশি কনশাস, প্রচণ্ডভাবে প্রস্তুত রাস্তায় নামার জন্য। তাদের আবেগ-আকাঙ্ক্ষাকে যদি অপমান করেন, পাকিস্তানি বা মৌলবাদী ট্যাগ দেন তাহলে সেই রাজনীতি পরাজিত হবে। মতরুণদের আকাঙ্ক্ষা থেকে শিখুন, তাদের সম্মান করুন। তাদের অসম্মান করলে কালেকটিভলি আমরা সবাই হেরে যাবো।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আমার বাংলাদেশ পার্টি বরিশাল জেলার সদস্য সচিব জি. এম. রাব্বি, যুগ্ম আহ্বায়ক সুজন তালুকদার, বরিশাল মহানগরের যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তানভীর আহমেদ, সদস্য হায়দার ভূঁইয়া, নাজমুল মুন্নাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।