নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দা সুলতানা পারভীন সোনিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে গাফিলতি ও অসদাচরণের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিক অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা হয়নি। তবে ডা. সোনিয়া অভিযোগের বিষয়ে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মেডিকেল অফিসার (এস.সি.এইচ.এফ.পি) হিসেবে ডাঃ সৈয়দা সুলতানা পারভীন সোনিয়া কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি একই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে কর্মরত আছেন। একইস্থানে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকায় নানা অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতি ও কর্মচারীদের প্রতি অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে আলোর মুখ দেখেনি। ডা. সোনিয়ার ওপর বাবুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনার চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব থাকলেও তিনি নিয়মিতভাবে তা পালন করছেন না। নিয়মানুযায়ী অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালীন মাসে আটদিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার বিধান সত্ত্বেও তিনি উপস্থিত থাকেন না। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক অপরাধ। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর, কেদারপুর, দেহেরগতি, চাঁদপাশা, রহমতপুর, মাধবপাশা ও বাহেরচর ইউনিয়নে সেবা প্রদানের দায়িত্বে থাকলেও এসব জায়গায় তার নিয়মমাফিক উপস্থিতির প্রমান মেলেনি। শুধুমাত্র ক্যাম্প হলেই তাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়। নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন। এতে করে সাধারন রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডা. সোনিয়া নিয়মিত ইউনিয়নগুলোতে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন না করেই ভুয়া টিএ (ভ্রমণ ভাতা) ও ডিএ (দৈনিক ভাতা) বিল জমা দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিকবার একই ধরণের বিল জমা দিয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের প্রমাণ রয়েছে বলে জানা যায়। ডাঃ সোনিয়া পরিবার পরিকল্পনার সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে হরহামেশাই খারাপ আচরন করে থাকেন। এমনকি রোগীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার নজিরও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বরিশালের স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ মেয়াদি জন্ম নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা ইমপ্লান্ট পড়ানো ও খোলা দুইটিই ডাঃ সোনিয়ার দায়িত্ব থাকলেও এফডাব্লিউভি (পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা) দ্বারা জোরপূর্বক তা করিয়ে থাকেন। যার ফলে প্রায়শই ব্যবস্থাটি ত্রুটিপূর্ন হয়ে থাকে। যা নিয়ে হর-হামেশাই সেবা প্রত্যাশীরা ক্ষোভ ঝারেন। মাধবপাশা ইউনিয়ন থেকে ইমপ্লান্ট এর চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রাবেয়া জানান, এর আগে দুইবার এ পদ্ধতি নিলেও এইবারের মতো কষ্ট কখোনই পাইনি। ডাঃ নিজে তার কাজ না করে অনভিজ্ঞদের দ্বারা ইমপ্লান্ট পড়ায়। এতে অসহ্য রকমের ব্যাথা অনুভূত হয়। উল্লেখ্য, এফডাব্লিউভি’দেরকে দিয়ে ইমপ্লান্ট পড়ানোর প্রমান প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। অভিযোগ আছে যে, বাবুগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মচারীদের টিএ বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিলের ৩০-৪০% টাকা ডাঃ সোনিয়াকে ঘুষ দিতে হয়। কারন হিসেবে তিনি বলেন এ অর্থ বরিশাল অফিসে ও হিসাব শাখায় জমা দিতে হয়। এ টাকা কেউ না দিতে চাইলে তাকে ডাঃ সোনিয়ার রোষাণলে পরতে হয়। এমনকি বিল আটকে দেয়ার হুমকিও প্রদান করা হয়। এছাড়াও কথায় কথায় কর্মচারীদের শোকজ দেয়ার নজিরও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলা পরবিার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সকল কর্মচারীরা ডাঃ সোনিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু উপর মহলের সাথে মাসতুতো ভাই সম্পর্কের জেরে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এদিকে চলতি বছরের ১৩ আগস্ট ডাঃ সোনিয়ার বিরুদ্ধে আবারো লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মচারীরা। এসব অভিযোগের বিষয়ে ডাঃ সোনিয়ার জানান, বাবুগঞ্জে আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ দেয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। আমি যথাযথ নিয়ম মেনেই অফিস করি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সকল অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের বিভাগীয় পরিচালক আবুল কালাম বলেন, ডাঃ সোনিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শতভাগ নিরপেক্ষতার সাথে তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।