ঝালকাঠিতে অটোরিকশা ও ভ্রাম্যমাণ বাজার, সড়কে চলা দায়

ঝালকাঠি শহরে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এবং সড়কে ভ্রাম্যমাণ বাজারের কারণে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলোতে যানজট, দুর্ঘটনার ঝুঁকি এবং চলাচলে বিঘ্ন দেখা দেয়। এতে কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
শহরের বাসস্ট্যান্ড, কলেজ মোড়, পূর্ব চাঁদকাঠি চৌরাস্তা, ফায়ার সার্ভিস মোড়, সাধনার মোড়, কালীবাড়ি রোড, সদর চৌরাস্তা, কামারপট্টি, কুমারপট্টি গার্লস স্কুল রোড ও পালবাড়ী মোড়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার কারণে মিনিটের পথ পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালে ঝালকাঠি পৌরসভার জনসংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ২৯ জন। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ১৬৮ জনে (পুরুষ ৩৭,৫২৬ ও নারী ৩৮,৬৪২ জন)। দ্রুত নগরায়ণের ফলে বর্তমানে আনুমানিক ৬৮ থেকে ৭০ হাজার মানুষ শহরে বসবাস করছেন। প্রতিদিন কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও যাত্রী মিলিয়ে অতিরিক্ত কয়েক হাজার মানুষ শহরে প্রবেশ করায় রাস্তায় তীব্র চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, আগে ১ হাজার ১৭৫টি অটোরিকশার লাইসেন্স থাকলেও বর্তমানে বৈধ স্মার্ট লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৭৫০টি। কারণ একজন চালককে কিংবা গাড়ির মালিককে একটির বেশি লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন রাস্তায় কয়েক হাজার অটোরিকশা চলছে, যার অধিকাংশই রেজিস্ট্রেশনবিহীন।
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত এবং সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনা আক্তার বলেন, ‘অটোরিকশার কারণে শহরের মধ্যে এতটাই যানজট হয় যে, আমরা হেঁটেও স্কুলে পৌঁছাতে পারি না। এমনকি ফুটপাতগুলোও দখল করে রাখা হয়েছে।’
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালক বাচ্চু বলেন, ‘শহরের মধ্যে তীব্র যানজটের কারণে রোগী পরিবহনে আমরা বিপদে পড়ি। অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি শব্দযন্ত্র ব্যবহার করলেও যানজটের কারণে পথ মেলে না।’
শহরের হোগলাপট্টি থেকে শীতলা খোলা মোড় এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত প্রতিদিন মাছ, মুরগি, সবজি ও ফল বিক্রি হচ্ছে। কেউ ভ্যান গাড়িতে, কেউ মাটিতে পশরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন। এতে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটেও চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া হোগলাপট্টি থেকে সাধনার মোড়সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ফুটপাত স্থায়ী দোকানগুলোও দখল করে ব্যবসা করছে, যে কারণে পথচারীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়ছেন।
জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ দোকানদারেরা বলেন, ‘আমাদের দোকান ভাড়া দিয়ে এত খরচের মধ্যে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। তাই রাস্তার ওপর বিকল্পভাবে কাজ করে কেবল জীবিকা নির্বাহ করছি। যদি ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি স্থান বা বাজারের ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে আমাদের জন্য অনেক সহজ হতো।’
অন্যদিকে স্থায়ী দোকানদারদের অভিযোগ, লাখ লাখ টাকা খরচ করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। অথচ রাস্তার দোকানদাররা বিনা মূল্যে কম দামে পণ্য বিক্রি করে ক্রেতা টানছেন। ফলে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। কালীবাড়ি রোডের ওষুধ ব্যবসায়ী তূর্য বলেন, ‘যানজট এবং ভ্রাম্যমাণ বাজারের কারণে ক্রেতারা শহরে আসতে চায় না। ব্যবসা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ঝালকাঠি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. রহমত মিয়া বলেন, ‘অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যানজট কমানো সম্ভব নয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, শহরে কোথাও আগুন লাগা বা দুর্ঘটনার খবর পেলে দ্রুত পৌঁছাতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া খুব কষ্টসাধ্য। অনেক সময় সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় আগুন নিয়ন্ত্রণ বা আহতদের উদ্ধার কাজে দেরি হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষের অভিযান প্রায়ই লোকদেখানো। মাঝেমধ্যে পরিচালিত হলেও পরবর্তী সময়ে আগর মতো যানজট দেখা দেয়। এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক মো. কাওছার হোসেন বলেন, শহরের ভেতরে রাস্তার দুই পাশে দোকান বসানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। বর্ষাকালে গ্রামে কাজ কম থাকায় অনেকেই শহরে এসে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালাচ্ছেন। মানবিক কারণে কিছুদিন অভিযান শিথিল করা হয়েছিল। তবে অতিরিক্ত ভিড় ও যানজটের কারণে এখন আবার অভিযান চলছে।