বরিশালে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে ৪ স্থানে সড়ক অবরোধ, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২৩:০৫, আগস্ট ১২ ২০২৫ মিনিট

স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারসহ তিন দফা দাবিতে বরিশাল নগরের চারটি স্থানে সড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন মহাসড়ক, চৌমাথা, অশ্বিনীকুমার টাউন হলসংলগ্ন সদর রোড এবং জিলা স্কুল মোড়ে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এসব মোড়ে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বরিশাল নগর থেকে রাজধানীসহ দূরদূরান্তে যান চলাচল বিকেল ৪টা পর্যন্ত কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়ে বরিশালসহ দক্ষিণবঙ্গের সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্কুলশিক্ষার্থীরা। ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্র দুপুর ১২টার দিকে অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনের সদর রোডে বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকে। এতে ব্যস্ততম এ সড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। নগরের মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এ কে স্কুল এবং আরজু মনি সরকারি স্কুলের ছাত্ররা এখানে জড়ো হয়।

মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হিসাম খান বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী দাইয়ান ইসলাম শেবাচিম হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা সদর রোড অবরোধ করেছে।’

জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের দাবিতে বরিশালে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয় গত ২৭ জুলাই। মঙ্গলবার আন্দোলনের ১৬তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় সড়ক অবরোধ।

নথুল্লাবাদ অবরোধ করায় গত রবি ও সোমবার পাঁচ জেলার পরিবহন নগরের ভেতর দিয়ে বিকল্প সড়কে চলাচল করত। তবে আজ নগরের ভেতরের সড়কেও অবরোধ করায় যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অচল ছিল ঢাকা বরিশাল মহাসড়কও। এতে হাজার হাজার যাত্রী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গন্তব্যে না যেতে পেড়ে বিপাকে পড়েন।

কথা হয় সদর রোড ও জিলা স্কুলের মোড়ে দুজন তিন চাকার যানবাহনের চালক জলিল মিয়া ও রজব আলীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, নগরের মধ্যেও রিকশা, মাহিন্দ্রা না চললে না খেয়ে মরতে হবে। অবরোধের কারণে তাঁরা কোনো যাত্রী পাননি।

আন্দোলনের প্রধান সংগঠক মহিউদ্দিন রনি বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশালে এসে ছাত্র-জনতার যৌক্তিক দাবি শুনতে হবে। তিনি না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল (বুধবার) নগরীর আরও অনেকগুলো পয়েন্ট অবরোধ করে পুরো বিভাগের সড়ক যোগাযোগ অচল করে দেওয়া হবে।’

এদিকে আন্দোলনের সমর্থনে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির দুজন ছাত্র শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রধান ফটকে সোমবার আমরণ অনশন করে। আজ তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর অনশনরত ওই দুই শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি এর আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, তাঁর কাজ হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি করা এবং রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করা।

বরিশাল বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসের সিকদার বলেন, ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে আজও (মঙ্গলবার) মহাসড়ক আটকে রাখে। জনসাধারণের দুর্ভোগ হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

এদিকে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ায় একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দুপুরে নগরের নথুল্লাবাদে এ ঘটনা ঘটে। আটক ব্যক্তির নাম সরোয়ার তালুকদার।

কর্মসূচিতে আসা তামিম নামের একজন বলেন, ‘সরোয়ার তালুকদার নামের ওই ব্যক্তি আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কথাও বলেছেন। শেষে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তব্য শেষ করেন। তখন আমরা তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিই।’

তবে সরোয়ার তালুকদার নামের ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। বক্তব্য দিতে গিয়ে ভুলে বলে ফেলেছেন।

বিমানবন্দর থানার ওসি জাকির হোসেন সিকদার বলেন, ‘একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আমরা ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করছি।’