কুয়াকাটায় পৌনে ৫ কোটি টাকার সৈকত সড়ক সমুদ্রে বিলীন, অনিয়মের সত্যতা পেলো দুদক

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২২:০২, আগস্ট ১১ ২০২৫ মিনিট

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৩০০ মিটার নির্মাণাধীন সৈকত সড়কটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই জোয়ারের পানিতে গত ২৯ মে সড়কটি সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
এ ঘটনায় ওইদিন সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি সড়কটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার পরে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। পরে সড়কটি পরিদর্শনে আসেন বিভাগীয় কমিশনার। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নামে দুদক। সোমবার (১১ জুলাই) দুপুরে কুয়াকাটা ডিসি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় ধসে যাওয়া সড়কের কাজের মান পরিদর্শন করে দুদক পটুয়াখালী জেলার সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন একটি টিম। পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক খালিদ হোসেন, কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক। পরিদর্শন শেষে সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘এই প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সরেজমিনে এসে আমরা যেটুকু পেয়েছি তাতে বোঝা যায়, এটি একটি অপরিকল্পিত প্রকল্প। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ইতোমধ্যেই উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার পুরো টাকাটাই জলে ভেসে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের শুরুতে একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ছিল। যেটি করা হয়নি। আমাদের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমরা সরেজমিনে যা পেয়েছি তার একটি রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবো। কমিশন থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানা গেছে, পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান কাজ করে। মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, মেসার্স আবরার ট্রেডার্স ও এসএম ট্রেডার্স। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইট ও বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজ ও পর্যটকদের চোখে এখন এ প্রকল্পটি ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যর্থতা’র প্রতীক। কোটি টাকার প্রকল্পে দায়িত্বহীনতা, স্বজনপ্রীতি ও পরিকল্পনার অভাব— সব মিলিয়ে প্রকৃত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছেন সবাই।