বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ
নিজেস্ব প্রতিবেদক|২১:৪৬, জুলাই ২৫ ২০২৫ মিনিট
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। বাংলা বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মিনহাজুল ইসলাম মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগ পত্রটি দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে মিনহাজুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় তুলনামূলক ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও দুটি কোর্সে (বাংলা সাহিত্য সমালোচনা ও গবেষণা-৪০২ ও জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য-৪০৭) তিনি অকৃতকার্য হন। এছাড়াও, আরও দুটি কোর্সে তাকে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। পরে নম্বরপত্র উত্তোলন করে তিনি দেখেন, ৪০২ নম্বর কোর্সে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে মাত্র ১২ এবং ৪০৭ নম্বর কোর্সে মাত্র ৭ নম্বর দিয়ে তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফেল করানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নম্বর গোপন রাখা হয়েছে এবং নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়নি।
তার দাবি, শিক্ষক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে ফেল করিয়েছেন। পরবর্তী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যখন তিনি এফ গ্রেড অপসারণ পরীক্ষায় অংশ নেন, তখনও একই শিক্ষক ব্যক্তিগত আক্রোশে তাকে পুনরায় অকৃতকার্য করিয়েছেন।
বাংলা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কোর্সে অভ্যন্তরীণ নম্বর ৪০ থাকে। মিনহাজুল ইসলামের গ্রেডশীট এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। গ্রেডশীট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চতুর্থ বর্ষে ভাইবাসহ মোট ১১টি কোর্সে পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০২ নম্বর কোর্সে অভ্যন্তরীণ নম্বর ১২ এবং ৪০৭ নম্বর কোর্সে মাত্র ৭ পেয়েছেন। ৪০৩ নম্বর কোর্সে রিপোর্ট থাকায় নম্বর আসেনি।
অন্যদিকে, অন্যান্য কোর্সে তার অভ্যন্তরীণ নম্বর ছিল, ৪০১ নম্বর কোর্সে ৩০.২৪, ৪০৪ নম্বর কোর্সে ২২.৫০, ৪০৫ নম্বর কোর্সে ২২, ৪০৬ নম্বর কোর্সে ২৬.৫০, ৪০৮ নম্বর কোর্সে ২০.২৫, ৪০৯ নম্বর কোর্সে ২০.৫০ এবং ৪১০ নম্বর কোর্সে ২৮.২৫।
বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিনহাজুলের ঘটনা নতুন নয়। বাংলা বিভাগে এমন ঘটনার নজির আরও অনেক আছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন যে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হয় এবং এর প্রভাব পরীক্ষার নম্বরে পড়ে। কেউ এ বিষয়ে কথা বললে তাদের ওপর আরও বেশি চড়াও হন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা মিনহাজের ঘটনা ছাড়াও বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে অন্যান্য দ্বন্দ্বের কারণ খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, আমরা সকল নোটিশ নোটিশ বোর্ডে দিয়েছি,অভিযোগকারী শিক্ষার্থী একজন ইয়ার ড্রপার। তিনি নিয়মিত ক্লাস করেন নি। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে যত পারসেন্ট ক্লাসে উপস্থিত থাকা দরকার তিনি তা থাকেন নি। একাধিক পরীক্ষা দেন নি, মিডটার্মে সাদা খাতা জমা দিয়েছেন। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেন নি, বার বার বলার পরও দেন নি। তার সকল বন্ধু ইন্টারনাল মার্ক পরীক্ষার আগেই পেয়েছে আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন কিন্তু তিনি নিয়মিত ক্লাস না করলে কীভাবে খোঁজ পাবে ইন্টারনাল মার্ক পাবলিশ হয়েছে কিনা।’
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান উন্মেষ রায় বলেন,‘যেহেতু অভিযোগ দিয়েছে। এখন তদন্ত করে আসল ঘটনা উদ্ঘাটন করা হোক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’