বরিশালে নিবন্ধিত থ্রি-হুইলার ১২ হাজার, চলছে ২৫ হাজারের বেশি

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২২:৩৫, জুলাই ০৯ ২০২৫ মিনিট

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে অবৈধ যানবাহনের দাপট। বিশেষ করে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় জনভোগান্তি যেমন বাড়ছে তেমনি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে সড়কে। বছরের পর বছর ধরে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় দুটি প্রতিষ্ঠান যানবাহনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এরমধ্যে বিআরটিএ নিবন্ধিত রয়েছে ৫ হাজার এবং সিটি করপোরেশনের রয়েছে ৭ হাজার ৬২০টি যানবাহন। বাস্তবতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোট ১২ হাজার ৬২০টি যানবাহন থাকলেও মেট্রোপলিটন এলাকায় নূন্যতম ২৫ হাজারের বেশি থ্রি-হুইলার চলাচল করে। এরমধ্যে রয়েছে সিএনজি, মাহিন্দ্রা, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট পদ শূন্য থাকায় সড়কে অভিযান চালাতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য আরও কয়েকটি পদ খালি থাকায় অবৈধ যানবাহন ঠেকাতে কোনো কাজই করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে চার বছর পর্যন্ত নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে সিটি করপোরেশনের। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নবায়ন ফি নির্ধারিত ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১০০ টাকা ফরম মূল্য এবং ব্লু-বুক ফি ১০০ টাকা। নবায়নে মোট দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৫০ টাকা। চার বছর ধরে নবায়ন বন্ধ থাকায় ১৮ কোটি টাকারও বেশি হারিয়েছে সিটি করপোরেশন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বলেন, রিকশার মহাজনি নবায়ন কার্যক্রম অনেক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। থ্রি-হুইলার নিবন্ধন কার্যক্রমও বন্ধ আছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কয়েকটি পদে জনবল সংকট থাকায় কার্যক্রম বন্ধ এবং অবৈধ যানবাহন ঠেকাতে ঠেকাতে নগর পুলিশের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। যান চলাচলে লাইসেন্সের বিষয়টি চালকরা জানলেও বিভিন্ন কারণে তারা লাইসেন্স গ্রহণ, এমনকি নবায়নেও অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। আমানতগঞ্জের বাসিন্দা থ্রি-হুইলার চালক ফারুক হোসেন বলেন, ‘নবায়ন করে লাভ কি বলেন? নবায়ন করলেও পুলিশে গাড়ি আটক করে, নবায়ন না করলেও গাড়ি আটক করে। পুলিশের হয়রানির হাত থেকে যেহেতু ব্লু-বুক ঠেকাইতে পারে না তাহলে নবায়ন করে কি লাভ? তার চেয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করলেই তো সড়কে চলাচল করা যাবে।’ আরেক চালক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার গাড়ির লাইসেন্স আছে। টাকা কর্জ করে তখন লাইসেন্স করেছিলাম। ভেবেছিলাম লাইসেন্স করালে অন্তত সিটি করপোরেশন এলাকায় হয়রানি হবে না। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বিভিন্ন রুটে চাঁদা দিতে হয়। রাস্তায় গাড়ি পেলেই পুলিশ আটক করে হয়রানি করে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি হয়রানি তো হই, তাহলে লাইসেন্স নবায়ন করবো কি কারণে?’ বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, বর্তমানে অগণিত অবৈধ থ্রি-হুইলার নগরীতে চলাচল করছে। জনবল সংকটের কারণে অবৈধ গাড়ি ঠেকাতে সিটি করপোরেশন সফলতা বয়ে আনতে পারছে না। এজন্য এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারাও তৎপরতা চালাচ্ছে। আমি মনে করি, অবৈধ যানবাহন আটকের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিতই ব্যবস্থা নিচ্ছে। অভিযানে জরিমানা করছে। বাস্তবতায় দেখা যায়, জরিমানার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে চালকরা বাধার সৃষ্টি করেন। তিনি জানান, গত একমাসে অভিযান চালিয়ে অবৈধ গাড়ির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে পুলিশ।