বরিশাল সিটির সাবেক মেয়রসহ ১৯ কর্মকর্তাকে দুদকের তলব

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:১৯, জুলাই ০৩ ২০২৫ মিনিট

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও প্রধান উচ্ছেদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসহ ১৯ কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানের এরই মধ্যে দুদকের বরিশাল অফিস থেকে ১৮ জন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তলব করা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ শাখার প্রধান স্বপন কুমার দাস, সার্ভেয়ার তাপস, সার্ভেয়ার নাছির ও মশিউর, সার্ভেয়ার ও আর্কিটেক্ট সাইদুর, জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা লকিতুল্লাহ, সম্পত্তি শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ, প্লান শাখার কর্মকর্তা লোকমান ও কালটু, সম্পত্তি শাখার মাহাবুবুর রহমান শাকিল, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, বাজার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম, ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেন্ডেন্ট আজিজুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এইচএম কামাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মুরাদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এবং সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সচিব মাছুমা আক্তার। দুদকের তলবকৃত নথিপত্রে মধ্যে রয়েছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ১৮ ব্যাক্তির নাম, পদবি, কর্মরত শাখার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, মোবাইল নম্বর সম্বলিত নথিপত্রসহ ব্যক্তিগত নথি। তলবকৃত নথিপত্রের মধ্যে আরও রয়েছে- সার্ভেয়ার তাপস্, সার্ভেয়ার নাছির, সার্ভেয়ার মশিউর, জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল, প্লান শাখার কালটু, সম্পত্তি শাখার ফিরোজ ও শাকিল, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, বাজার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম ও ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেডেন্টের আজিজুর রহমানের নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। অন্যদিকে, সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের সময় সিটি কর্পোরেশনের দীঘির মালিকানা সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও বালু ভরাট সংক্রান্ত কাজের রেকর্ডপত্র, ২০২২ সালে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ব্যানার তৈরির জন্য বরাদ্দকৃত ১৩ লাখ টাকা, খোকন সেরনিয়াবাতের ফেসবুক পেজের বুস্টিংয়ের বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার রেকর্ডপত্র এবং সাবেক মেয়রের ল্যাপটপ, ড্রোন ক্যামেরা, চেয়ার, টেবিল, মনিটর, আইটি মেশিনসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় বাবদ বরাদ্দকৃত ৫০ লাখ টাকা খরচের যাবতীয় রেকর্ডপত্র তলব করে দুদক। দুদক সূত্রে জানা যায়, তলবকৃত রেকর্ডপত্রের মধ্যে কিছু কিছু নথি দুদকের পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। তবে এখনও অনেক নথি পাওয়া যায়নি। আর অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক মোজাহার আলী সরদার বলেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বর্তমানে নথিপত্রের সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। এর বেশি আপাতত কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সদ্য অপসারিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেমিশে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তাদের যৌথ কারসাজিতে অবৈধ নিয়োগ, প্রতিটি দপ্তরে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, ঘুষ বাণিজ্য, ব্যাপক অর্থ লোপাটসহ সব ধরনের দুর্নীতি করে সরকার ও জনগণের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। এদের মধ্যে উচ্ছেদ শাখার প্রধান স্বপন কুমার দাস দুর্নীতির অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ শাখার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি মূলত পরিসংখ্যানবিদ। সাবেক মেয়রসহ ঊর্ধ্বতনদের যোগসাজশে বর্জ্য বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী সরকারের সময় ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা ইএনও এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষের আলোচিত ঘটনার এজাহারভুক্ত আসামি স্বপন কুমার দাস। এছাড়া তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সার্বিক বিষয়ে স্বপনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ কিংবা মেসেজ দিলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল বলেন, ‘আমি একটি ব্যক্তিগত বিষয়ে দুদকের চিঠি পেয়েছি। শিগগিরই চাহিদাকৃত নথি সরবরাহ করা হবে। তবে বাকিদের অভিযোগ বা নথির বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো না। কেননা আলাদাভাবে দেওয়া চিঠির তথ্য জানলেও অভিযোগের বিষয় সম্পর্কে আমরা জানা নেই।’