বরগুনায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, আইসিইউ না থাকায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
দেশ জনপদ ডেস্ক|২০:৪৭, জুন ২২ ২০২৫ মিনিট
বরগুনায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। তবে বরগুনার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। হাসপাতালে থাকা আইসিইউ সুবিধাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্সটিও অকেজো। এতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পর অবস্থা গুরুতর হওয়া রোগীদের বরিশাল বা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে। এতে রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়ছেন স্বজনেরা। যাত্রাপথে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে।
সরকারি হিসাবে, গত জানুয়ারি থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত বরগুনা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু বেসরকারি হিসাবে ১১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে। প্রতিদিনই জেলাটিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
বরিশাল বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ২৯০ জন ডেঙ্গু নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু বরগুনায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৬ জন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের তথ্যমতে, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি কার্যত এক মাস ধরে ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু নিয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২১৭ জন।
বর্তমানে বরগুনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে তা দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। হাসপাতালে শয্যাসংকট, জনবলঘাটতি, সর্বোপরি আইসিইউ না থাকায় রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেন, ‘শুধু শয্যাসংকট নয়, গুরুতর অবস্থার রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিইউ সুবিধার অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেও অনেক সময় আমরা কিছুই করতে পারি না। অসহায় হয়ে পড়ি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজওয়ানুল আলম বলেন, ‘রোগীর চাপ সামাল দিতে আমরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি; কিন্তু আইসিইউ না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠানো (রেফার) ছাড়া কোনো উপায় নেই। এটি আমাদের জন্যও মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বরগুনা সদর হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় গুরুতর রোগীদের বরিশাল অথবা ঢাকার বড় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউ সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সটিও অকেজো হওয়ায় সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এসব রোগীকে পাঠানো হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা মহামারির সময় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে একটি আইসিইউসুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু করোনার পর অ্যাম্বুলেন্সটি খুব একটা ব্যবহৃত হয়নি। হাসপাতালের গ্যারেজে থাকতে থাকতে এটি অকেজো হয়ে পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের মর্গের পাশে গ্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, সেটি তালাবদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সের চালক কয়েক দিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পরে তাঁর অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে ঢাকার একটি হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বরগুনায় ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও নেই কোনো আইসিইউ ইউনিট। সচল আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সও নেই। এতে সংকটাপন্ন রোগীদের বরিশাল পর্যন্ত পাঠাতে গিয়ে অনেক সময়ের অপচয় হয়। আর এ সময়ে কারও কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে উপকূলীয় এই জেলায় তা মহামারি আকার ধারণ করেছে। শহরের প্রতিটি পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আইসিইউ না থাকা শুধু দুঃখজনক নয়, এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতাও। দ্রুত আইসিইউ স্থাপন ও আইসিইউ সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স সচল না করলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও বাড়বে।
বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ‘হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হবে।’