বরিশালে দালালদের দখলে টিকিট, লঞ্চ-বাসের ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ

এ.এ.এম হৃদয় | ২১:০১, জুন ১২ ২০২৫ মিনিট

ঈদের ছুটি শেষে লঞ্চ ও বাসে যাত্রী চাপ বেড়ে যাওয়ায় কাউন্টারে মিলছে না টিকিট। অধিকাংশ বাস কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকেও টিকিট কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে যাত্রীরা। তাই বাধ্য হয়ে দেড় থেকে দুই গুণেরও বেশি টাকায় দালালদের কাছ টিকিট কিনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তবে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টার্মিনালগুলোতে কাজ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। বুধবার (১২ জুন) বরিশাল নৌবন্দর ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে সরেজমিনে দেখা গেছে। তথ্য মতে, যাত্রী সামাল দিতে প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ভায়া ও সরাসরি মিলিয়ে অর্ধ ডজন বিলাসবহুল নৌযান যাত্রী পরিবহণ করছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এ রুটের লঞ্চে এক হাজার টাকার সিঙ্গেল কেবিন ১২শ ও ২ হাজার টাকার ডাবল কেবিন হয়েছে ২৪০০ টাকায় বিক্রি করলেও তা পাচ্ছে না সাধারণ যাত্রীরা। কারণ এসব টিকিট আগেই দখলে নিয়েছে কালোবাজারিরা। ফলে কাউন্টার বা নৌবন্দরে গিয়েও মিলছে টিকিট। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রীদের দেড় বা দুইগুণ বেশি দামে সেই টিকিট কিনতে হচ্ছে নৌবন্দরে থাকা দালাল চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে। লেদু, ইমাম, বসির, খোকনসহ ডজনখানেক ব্যক্তি টিকিট কালোবাজারি করে থাকেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এছাড়া এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী হয়রানির অভিযোগে কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোস্টগার্ড। এদিকে ঢাকা-বরিশাল সড়ক পথে অধিকাংশ বাসের অগ্রিম সকল টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট কিনতে ব্যর্থ হয়েছে। কাউন্টারেও মিলছে না টিকিট। পরে সাড়ে ৫শ টাকার টিকিট এক হাজার থেকে ১২শ টাকায় দালালদের কাছ থেকে কিনতে হয়েছে যাত্রীদের। ফলে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল নথুল্লাবাদে কাশেম ও মান্নানের নামে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ রয়েছে। চালাল চক্রের সদস্যরা অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় বিভিন্ন কৌশলে তা দখলে নিয়ে নেয়। এর সঙ্গে লঞ্চ ও বাসের কাউন্টারের এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারীরাও জড়িত বলে জানা গেছে। তবে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ও বাস কর্তৃপক্ষের দাবি, যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে তারা নিয়মানুযায়ী ভাড়া আদায় করছে। বাসযাত্রী ইমতিয়াজ অমিত বলেন, ১৪ তারিখ ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকিট কিনতে একটি বাস কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি। তখন বিক্রির জন্য টিকিট উন্মুক্ত করার পর দুটি সিট অবিক্রীত দেখতে পাই। তখন ওই একটি সিট কিনতে চেষ্টা করেও পারিনি। পরে স্বাভাবিক সময়ের সাড়ে ৫শ টাকার বাসের টিকিট দালালদের কাছ থেকে কিনতে হয়েছে ১২০০ টাকায়। লঞ্চ যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, লঞ্চের কাউন্টারে ঘুরেও কেবিনের একটি টিকিট কিনতে পারিনি। পরে লঞ্চঘাটে থাকা একজন দালালের কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে কেবিনের টিকিট কিনতে হয়েছে। আর যাত্রী হয়রানিও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি তার। বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অসীম কুমার বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। দালালদের ধরতে অভিযান চালানো হবে। তাছাড়া আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নেব। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের উপ-পরিচালক সেলিম রেজা জানান, দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। যাত্রী হয়রানিসহ যেকোনো অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বরিশাল নগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, লঞ্চ ও বাসটার্মিনালে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধসহ শতভাগ যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও রয়েছেন। স্থায়ীভাবে এ সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তাসহ জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা কামনা করেন তিনি।