মানবিক করিডোর দিন শেষে সামরিক হয়ে যায় : আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
এ.এ.এম হৃদয়|২২:১৮, মে ০৩ ২০২৫ মিনিট
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, আমরা দুনিয়ার বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় দেখেছি মানবিক করিডোর দিন শেষে আর মানবিক থাকে না, অমানবিক, সামরিক হয়ে যায়। গৃহযুদ্ধ তৈরি হয়। আমার ভূ-রাজনীতি, আমার অর্থনীতি বিবেচনা করতে হবে, সেই সাথে আমি এখানে পরাশক্তির খেলার ফুটবল হতে পারব না। এ জায়গায় আমরা বোধ করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে সিরিয়াসলি পরামর্শ করা দরকার এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে বরিশাল প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলার মিলনায়তনে এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বরিশাল বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়ে নাগরিক সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, জাতিসংঘ যদি কোনো মানবিক করিডোর জাতিসংঘ চায় তাহলে বাংলাদেশে সরকার দিতে পারে। আর এ বিষয়টি সরকার পাবলিকও করছে। কিন্তু সরকার ফাইনালি দেবে কিনা সেটার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বোধ করছে। তাদের সাথে এত বড় সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার। এবি পার্টিও এটা মনে করে। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত প্রতিটি বিষয় নিয়ে আমরা বোধ করছি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো নিয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তটা নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, নির্বাচন, সংস্কার, বিচার এর কোনোটার সাথে কোনোটার সাংঘর্ষিক বাস্তবতা নেই। পুরোটা মিলিয়ে গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা ১৭-১৮ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনের দাবি করছে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে চাইবে জনগণের মতামত নিয়ে, সে নির্বাচন চাইবে এটা যৌক্তিক এবং এটা হাজার বার চাওয়াটাও যৌক্তিক। আর এটা করলে তাদেরকে ট্রল করা, হেয় করাটা একদম অনৈতিক।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্র হচ্ছে দেবী দুর্গার দশ হাতের মতো। রাষ্ট্র একটা কাজ করলে আরেকটা করতে পারবে না, ব্যাপারটা সেরকম নয়। আলাদাভাবে তাকে শত কাজ করতে হবে। তাকে রাস্তাও মেরামত করতে হবে, নাগরিকদের সুরক্ষাও দিতে হবে, হাসপাতাল বানাতে হবে, ডাক্তার তৈরি করতে হবে, ৪২ বিসিএস থেকে দুই হাজার ডাক্তারও নিতে হবে, রেড ক্রিসেন্টের দুর্নীতিও বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রকে প্যারালালই সবই করতে হবে এবং সে ক্ষমতা রাষ্ট্রের রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রফেসর ড. ইউনূস যে ডেডলাইন দিয়েছেন ডিসেম্বর থেকে জুন, এটা যথেষ্ট যৌক্তিক। ইন্টারন্যাশনালি উনি যে কথাটা দিয়েছেন, তার ইমেজের কারণে তিনি ওই ওয়াদা থেকে ফিরে আসবেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। এখন পর্যন্ত উনাকে সন্দেহ করার কোনো জায়গা আমাদের কাছে নেই। অতএব এই রোডম্যাপের ওপর আমরা ভরসা রাখতে চাই। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডায়ালগ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে কন্টিনিয়াসলি রাজনৈতিক দল অংশীজনের সবার সাথে কথা বলা দরকার, যাতে আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি কমে যায়।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী প্রোপাগান্ডা মেশিন আছে অনলাইনে এবং অফলাইনে। তারা পরিকল্পিতভাবে বিএনপি সেজে এনসিপিকে অ্যাটাক করছে এবং এনসিপি সেজে বিএনপিকে অ্যাটাক করছে। অনলাইনে দেখবেন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং এনসিপির নেতাকর্মীরা দ্বন্দ্বে-সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও হাতাহাতি মারামারিতে পর্যন্ত গড়াচ্ছে। আমাদের বক্তব্য গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে আমরা বিভাজিত দেখতে চাই না। দেশের মানুষও দেখতে চায় না। দেশের মানুষ দিল্লি এবং আওয়ামী লীগ সাপেক্ষে সবাইকে একত্রিত দেখতে চায়। কিন্তু এর মধ্যে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য থাকবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সহনশীলতার ভিত্তিতে দ্বিমত থাকবে। আমরা একজন আরেকজনের সমালোচনা করবো কিন্তু কারও সম্মান ক্ষুণ্ন করে নয়, অসহনশীল হয়ে নয়।
স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়েও এমন কোনো বাস্তবতা তৈরি হয়নি যে কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোনো সরকার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে সেটা হলো বাংলাদেশে কোথাও কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। সেটা কেন্দ্রেও নেই, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভাতে নেই। আর ইউনিয়ন পরিষদে যেগুলো ছিল সেগুলো পালিয়েছে। টোটাল রাষ্ট্র চলছে আমলা নির্ভরতা দিয়ে। এই রিয়েলিটি আমরা ৭১ এর যুদ্ধের সময়ও দেখিনি। এর ফলে প্রত্যেকটি সেক্টরে সেবা অলমোস্ট ব্রেকডাউন করেছে। আর এজন্য আমরা বলেছিলাম যারা বিএনপি, জামায়াত এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাস্তবতা থেকে নির্বাচিত হয়েছিল তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় কিনা সেটি বিবেচনা করার জন্য। তবে এজন্য একটি নীতিমালা ও উপকমিটি করা প্রয়োজন। যাতে ১৬ বছরে ওই ব্যক্তিদের কি রোল ছিল সেটা দেখা যায়, কারণ এটা যেন কোনোভাবে আবার ব্যাকডোর দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কারখানায় পরিণত না হয় সেটাও দেখতে হবে। তবে এতে একমত না হতে পারলে আপনি নির্বাচন দিতে পারেন। নির্বাচনে না যাওয়ার বিপক্ষে অনেক শক্তিশালী মত আছে, যাওয়ার পক্ষেও আছে।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গত ২০ বছরে কোনো নির্বাচন করেনি। এ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা কতটুকু আমরা জানি না। বিগত সময়ে নির্বাচন কমিশন যেহেতু কোনো নির্বাচন করেনি, আপনি যত গুড ফেইতেই তাকে একটা ভালো নির্বাচন করতে বলেন না কেন সে তার সক্ষমতা প্রমাণ করার সময় পাবে না। অতএব স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচন করার মাধ্যমেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা সক্ষমতা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা সক্ষমতা যাচাই করার একটা সুযোগ আছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রয়োজন ঐকমত্য। অনেক সঠিক সিদ্ধান্তও ঐকমত্য ছাড়া করা ঠিক হবে না। জাতীয় ঐকমত্য এ সময়টাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের শত্রুরা সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের এবং সরকারকে আন্ডারমাইন্ড করতে। কিন্তু সবার আগে বাংলাদেশ হওয়ায় বাংলাদেশের স্বার্থ আমাদেরকে সব থেকে গুরুত্বের সহিত দেখতে হবে।