ভোলার মেঘনার বুক চিরে তোলা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালু

আল-আমিন | ২১:৫০, মার্চ ১৫ ২০২৫ মিনিট

ভোলার মনপুরা উপজেলার পূর্ব-পশ্চিম পাশের মেঘনা নদীতে একাধিক কাটার মেশিন (ড্রেজার) দিয়ে দিন-রাত দফায় দফায় তোলা হচ্ছে বালু। এলাকাবাসীর অভিযোগ অবৈধভাবে তোলা এসব বালু ব্যবহৃত হচ্ছে মেঘনা তীর সংরক্ষণ কাজে। নদী তীরবর্তী কাছাকাছি এলাকা থেকে বালু উত্তোলনে নদী তীর রক্ষা বাঁধ পড়েছে হুমকির মধ্যে এবং মেঘনায় মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। পাশাপাশি স্থানীয় আবাধি জমি ও বসতবাড়ি রয়েছে হুমকির মধ্যে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এই ড্রেজার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এখন তাদের সাথে আরেকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মিলেমিশে এখন এই বালু তোলার কাজ করছে। দেশের সবচেয়ে বড় নদী মেঘনার মনপুরা অংশের চিত্র যখন এমন, তখন শুক্রবার (১৪ মার্চ) পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করে আসছে দিবসটি। মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে গত ৩ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ কয়েক দফায় গিয়ে দেখা গেছে, মনপুরার অংশের মেঘনার কয়েকটি অংশে ১০-১৫ টি ড্রেজার দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। কোথাও নদী তীরবর্তী আনুমানিক ১০০ মিটারের কাছাকাছি, কোথাও ৩০০ মিটার কোথাও আধা কিলোমিটার কাছ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। এই সমস্ত বালু ড্রেজারে কেটে বাল্কহেডে করে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মেঘনা ভাংঙ্গন থেকে রক্ষা প্রকল্প বেড়ীবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে। এই সময় ছবি ও ভিডিও করতে গেলে দায়িত্বে থাকা লোকজন বাঁধা দেয়। এছাড়াও এই বিষয়ে উল্টাপাল্টা কিছু না করার জন্য বলা হয়। তবে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়টি অভিযোগ অস্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদৌলা জানান, গত বছর মেঘনায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে বালু তোলার অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেঘনার আধা কিলোমিটার এলাকা থেকে বালু তোলা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে, তিনি ওদের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এদিকে মেঘনার তীর থেকে এক কিলোমিটার দূর থেকে বালু তোলার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয়টি সর্ম্পকে অনেকে জানান, তখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রে উৎকোচ দিয়ে অবৈধভাবে মন্ত্রণালয় থেকে বালু তোলার বিষয়টি পাশ করিয়ে আনেন। এক কিলোমিটার দূর থেকে বালু তোলা হলে মেঘনা তীর রক্ষা প্রকল্পটিসহ দ্রুত ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে সরকারের টাকা গচ্ছা যাবে। দুর্ভোগে পড়বে স্থানীয়রা। তাই মেঘনা থেকে দ্রুত বালু তোলা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। জানা যায়, মনপুরা উপজেলা মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয় একনেকে। সেই প্রকল্পটি ১৪ টি প্রজেক্টের মাধ্যমে টেন্ডার আহবান করা হয়। সেই টেন্ডারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, এনডি ৩টি, ওটিডিএল ১ টি, পিডিএল ২ টি, লিয়াকত আলী এন্ড সন্স ৩ টি, ওয়স্টোর্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ২টি ও গোলাম রাব্বানী কনস্ট্রকশন লিমিটেড ৩টি কাজ পায়। এরা স্থানীয় ঠিকাদারকে (আওয়ামীলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের) বালু তোলার কাজ দেয়। এখন এদের সাথে আরেকটি রাজনৈতক দলের নেতারা মিলেমিশে এই কাজ করছে। এ ব্যাপারে অনেকে ভয়ে কথা বলতে রাজি হননি তারপরও স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব, সজিব, হেলালসহ অনেকে জানান, আগে বালু তোলার কাজটি করতো পতিত সরকারের লোকজন। এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজন মিলেমিশে বালু তোলার কাজটি করছে। এতে দেশের মানুষরে ক্ষতি করে তারা কোটি কোটি টকা কামাই করছে। এ ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান কবির জানান, অভিযোগ পেলে সরেজমিনে গিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিখন বনিক জানান, নদীর ১ কিলোমিটার দূর থেকে বালু তুলতে বলা হয়েছে। তারপরও তারা যদি কাছ থেকে তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’