পটুয়াখালীতে খাদ্য সহায়তা না দিয়েই মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, হতাশ জেলেরা
নিজেস্ব প্রতিবেদক|১৯:১৯, মার্চ ১১ ২০২৫ মিনিট
জেলেদের খাদ্য সহয়তা না দিয়েই শুরু হয়েছে দেশের ছয় অভায়শ্রমে মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় রমজানের বাজার করতে পারেনি অনেক জেলে পরিবার। এমন অবস্থায় চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটছে পটুয়াখালীর তেঁতুলীয়া নদীতে মাছ শিকারি হাজার হাজার জেলের।
নদীতে মাছ শিকার বন্ধ। তাই বেকার সময়ে কেউ নতুন জাল বুনছেন, আবার কেউ ছেড়া জালে জোড়া লাগাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ট্রলার মেরামত করছেন। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় এভাবেই বেকার সময় পার করছেন পটুয়াখালীর তেঁতুলিয়া পাড়ের জেলেরা।
জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে নিবন্ধিত প্রতি জেলেকে দুই মাসের জন্য ৪০ কেজি করে ৮০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই সহায়তার কিছুই না দিয়েই গত ০১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। তাই রমজানের শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কার কবলে পড়তে হলো বেকার জেলে পরিবারগুলো। অনেকেই রমজানের বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছেন। চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
চরমোন্তাজের জেলে স্বপন মাঝিসহ স্থানীয় জেলেরা জানান, ‘নদীতে বেশ কিছু দিন জালে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। আশায় ছিলাম সে খড়া কাটবে এবং সরকারি খাদ্য সহায়তা পেলে পরিবার নিয়ে রমজান মাসটা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারব। কিন্তু কোনো আশাই আমাগো পূরণ হলো না। এখন পর্যন্ত না পেলাম মাছ, না কোনো সরকারি সহয়তা। কীভাবে এখন বাজার সদায় করব। আশা ছিল রোজার মাসটা কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই ইবাদাতে কাটিয়ে দেব। যে অবস্থা দেখি তাতে আমগো না খেয়ে রমজান কাটাতে হবে।’
জেলে শাহ আলম জানান, ‘আমরা অনেক জেলে এখানে আছি নিবন্ধনের বাইরে। আমাদের জেলে কার্ড হবে বলে নাম দিয়েছি প্রায় দুবছর। এখনও পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি। মৎস্য বিভাগের কাছে জোর দাবি করছি আমাদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করুন।’
জেলেরা আরও জানান, বছরের তিন-চার বার নিষেধাজ্ঞা থাকে মাছ শিকারের ওপর। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে বেকার জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা বরাদ্ধ থাকলেও প্রতি বছরই তা বিতরণ করা হয় শেষ দিকে। নিষেধাজ্ঞা শেষে চাল পেলে তা দিয়ে কষ্ট দূর হয় না। তাই এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল বিতরণের জন্য নতুন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের ৬টি অভায়াশ্রমে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের জন্য সবধরণের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সরকার। যারা এ নির্দেশনা মেনে চলবে তাদের দুবারে ৮০ কজি চাল দেওয়া হবে। আর যেসব জেলেদের নিবন্ধন এখনও হয়নি তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর রুস্তুম থেকে ভোলার ভেদুরীয়া পর্যন্ত, তেঁতুলীয়া নদীর একশো কিলোমিটার এলাকাকে অভায়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালীতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৫ হাজার। এর বাইরেও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার অর্ধলাখ জেলে। বছরের পর বছর এ পেশায় কাজ করেও এখনো নিবন্ধনের আওতায় আসেননি অনেকে। তাই তাদের ভাগ্যে জুটে না সরকারি কোনো সহায়তা।