সনদ জালিয়াতি করে পায়রা বন্দরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে চাকরির অভিযোগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:২৪, মার্চ ০৬ ২০২৫ মিনিট

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (হারবার) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও অভিজ্ঞতার ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে গত পাঁচ বছর বন্দরে চাকরি সুবাদে নানা অনিয়ম করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে বন্দর থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা কার্যালয়ে বদলি করা হয়। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার অ্যান্ড মেরিন শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে আবুল কালাম আজাদ সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে আবেদন করেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার থেকে পাস করায় সহকারী প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী পদে তার আবেদনের কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু তৎকালীন সরকারদলীয় নেতাদের তদবিরে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সনদ না থাকা সত্ত্বেও সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেন তিনি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পায়রা বন্দরে নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে নিয়োগের যোগ্যতা হিসেবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি এবং সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সংশ্লিষ্ট কাজে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে মর্মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল। কিন্তু আবুল কালাম আজাদ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী হওয়ায় আবেদনের সুবিধার্থে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নামে একটি জাল সনদ তৈরি করেন। ওই সনদ তৈরিতে তাকে ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি সহযোগিতা করেছেন। অথচ আবুল কালাম স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হননি। তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০০২ সালে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার) হিসেবে কাজ শুরু করেন।

বন্দরের এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় তার চাকরি নেওয়া এবং পাসের তারিখ দেখলে। অর্ধাৎ পাস করার আগেই সনদ জমা দিয়েছেন। ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর ওই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান তাকে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেয় এবং সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ওই পদে ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চার বছর কর্মরত ছিলেন; যা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত অভিজ্ঞতা থেকে এক বছর কম। এ ছাড়া জাল সনদ অনুযায়ী, তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন ২০১০ সালের এপ্রিলে। অথচ পাস করার প্রায় ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর তিনি সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন মর্মে তার আবেদনে উল্লেখ করেন। এই হিসেবে তার বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ ও অভিজ্ঞতার সনদ ভুয়া বলে প্রতীয়মান হয়। ভুয়া সনদ অনুযায়ী অভিজ্ঞতা পাঁচ বছরের কম থাকা সত্ত্বেও অবৈধ পন্থায় তাকে নিয়োগ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের কর্মকর্তাদের প্রথম বেসিক প্রফেশনাল ট্রেইনিং কোর্সের সুভেনিয়র বইতে তার এসব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ আছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নিয়োগ পাওয়ার পর বন্দরের সব ধরনের উন্নয়নকাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বন্দরের কাজ করাতেন তিনি। পরবর্তীতে রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও ম্যন্টেইন্যান্স ড্রেজিং প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক হওয়ার জন্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও নৌপরিবহন মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করান। তাদের তদবিরে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আজাদকে ক্যাপিটাল ও ম্যন্টেইন্যান্স ড্রেজিং প্রকল্পের উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেন। এ সুযোগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে তাকে সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পায়রা বন্দর থেকে ২০২৩ সালে বিআইডব্লিউটিতে বদলি করা হয়।

অভিযোগ আছে, বন্দরে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার শান্তিনগরে ১৫৫০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন; যার একটিতে নিজে থাকেন এবং অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন। পায়রা বন্দর এলাকায় কয়েক কোটি টাকার জমি কিনেছেন। ঢাকার রামপুরা এলাকায় একটি প্লট ও একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি এখন পায়রা বন্দরে নেই। বর্তমানে ঢাকায় বিআইডব্লিউটিতে কর্মরত আছি। আর এসব অভিযোগের বিষয়ে আমার কাছে প্রশ্ন করে কোনও লাভ নেই। যারা অভিযোগ করেছে তাদের বলেন, তথ্য-প্রমাণসহ আমার মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে। তখন মন্ত্রণালয় তদন্ত করে অনিয়ম-দুর্নীতি পেলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’