কৌশলে স্ত্রীকে বাড়ি ছাড়া করে পরকীয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেছেন কলেজশিক্ষক! মামলা তুলে নিতে স্ত্রীকে হত্যার হুমকি
দেশ জনপদ ডেস্ক|১৮:৫৪, মার্চ ০৪ ২০২৫ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশুসন্তানসহ স্ত্রীকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেছেন বরিশালের সরকারি হিজলা কলেজের প্রভাষক আরিফুর রহমান আরিফ। এই অনাচারের সুবিচার চেয়ে ভুক্তভোগী নারী আদালতে মামলা করেও স্বস্তিতে নেই। বরং তাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামী লীগ মনস্কা শিক্ষক। সর্বশেষ একই কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক আতিকুর রহমান আজাদকে দিয়ে ফোন করিয়েও হুমকি দেওয়া হয়েছে। মুঠোফোনে এসব অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী সুমি আক্তার। পেশায় নার্স এই নারী একমাত্র সন্তান নিয়ে রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বরের বড় মসজিদ এলাকায় বসবাস করছেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান, হিজলার পত্তনিভাঙা গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান রাজধানীর পল্টনে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ওই সময় অর্থাৎ ২০১১ সালে আরিফের সাথে তার পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। এবং এর বছরখানেকের মাথায় আরিফ সরকারি হিজলা কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাসায় চলে আসেন। এরপর থেকে গ্রামের বাড়িতেই শিক্ষক আরিফ বসবাস করেন, ২০১৭ সালে তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
সুমি আক্তার জানান, স্বামী-সন্তান নিয়ে কয়েক বছর সুখেশান্তিতে থাকলেও ২০১৯ সালে তার শ্বশুর হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পরে নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশই বাড়তে থাকে। এবং খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী আফির চাচাতো বোনোর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকে অসংখ্যবার নির্যাতন করা হয়। কিন্তু শিশুসন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তিনি স্বামীর সংসারে থেকেছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে করোনাকালীন আরিফ স্থানীয় কাউরিয়া বাজারে ফার্মেসি দেওয়ার কথা বলে তার (সুমি আক্তার) কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন, যা তিনি বাবার পরিবারের কাছ থেকে এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরেও শিক্ষক আরিফের মন পাওয়া যায়নি, বরং কাউরিয়া বাজারে ফার্মেসি করতে দেওয়াই যেনো তার জীবনে বড় কাল হয়েছিল। ফার্মেসি চালাতে গিয়ে শিক্ষক আরিফের পরকীয়ার মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক অশান্তিও তিনি বৃদ্ধি করেন।
এরপর আরিফ তার স্ত্রী সুমিকে সন্তানসহ রাজধানী ঢাকায় বাসা ভাড়া করে রাখার অভয় দেন। কিছুদিন পরে সন্তানসহ স্ত্রীকে সেখানে পাঠিয়ে দেন ঠিকই, কিন্তু আরিফ পরবর্তীতে একবারের জন্যও সেখানে যাননি। এবং কোনো প্রকার ভরণপোষণ না দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাকে ফোন করে উল্টো যৌতুক বাবদ তিন লাখ টাকা দাবি করেন। এই ঘটনায় সুমি আক্তার আদালতে একটি মামলাও করেছেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
খোরপোষের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মামলাটি থেকে আরিফ জামিনে মুক্ত হলেও সুমি আক্তার এবং তার শিশুসন্তানের কেনো খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। সুমি আক্তারের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভরণপোষণতো দেইনি, উল্টো বহুমুখী চাপের ওপর রাখছেন তার প্রাক্তন স্বামী শিক্ষক আরিফ। হয়রানির এসব ঘটনা আদালতের পাশাপাশি সরকারি হিজলা কলেজের অধ্যক্ষসহ কজন শিক্ষককেও অবহিত করা হয়েছে, কিন্তু এতে কোনো সুফল মেলেনি। বরং বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধামকি শুনতে হয়েছে, এমনকি শিশু-সন্তানসহ সুমি আক্তারের জীবননাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।
সর্বশেষ নীতিবিবর্জিত এই শিক্ষকের পক্ষালম্বন করে সুমি আক্তারকে মুঠোফোনে কল করে হুমকি দিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া শিক্ষক আতিকুর রহমান আজাদ। আরিফের বিরুদ্ধে চলমান মামলা তুলে নেওয়াসহ তাদের নিয়ে বিষয়টি আপস মীমাংসা করতে একাধিকবার চাপপ্রয়োগ করা হয়। এই ঘটনাটি মিরপুর থানা পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে অবহিত করে রেখেছেন সুমি আক্তার। এমনকি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওমর ফারুককেও জানানো হয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে কেনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে জানতে কলেজ অধ্যক্ষকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানান, এই ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। এবং এ সম্পর্কে তিনি মোটেও ওয়াকিবহাল নন। তবে সুমি আক্তার দাবি করেছেন, পুরো ঘটনাটি অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং তার নির্দেশনার আলোকেই হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক আরিফকে রক্ষার্থে শিক্ষক আজাদ কাজ করছেন। ইতিমধ্যে মামলা তুলে নিতে আজাদ একাধিকবার ফোন করে হুমকিও দিয়েছেন, অভিযোগ করেন সুমি আক্তার।
মঙ্গলবার সর্বশেষ খবরে সুমি আক্তার জানিয়েছেন, তাদের একমাত্র সন্তানটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই খবরটিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছেলের পিতা আরিফকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তিনি কোনোরূপ যোগাযোগ রক্ষা করছেন না, উল্টো আজাদ স্যারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
তবে সুমি আক্তারের এসব অভিযোগ করে শিক্ষক আরিফুর রহমান মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলছেন, তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, কলেজের ভেতরে অনেকে এতে জড়িত, তাকে কী ভাবে বিতর্কে জড়ানো যায় সেই চেষ্টা করছে। এছাড়া তিনি সকল প্রকার আইন মেনে স্ত্রী সুমি আক্তারকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন।’