রমজানে সারা দেশে ভেজালবিরোধী বিশেষ অভিযান

পবিত্র রমজান মাসে ইফতারিসহ নিত্যপণ্যের মান যাচাইয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। প্রথম রোজা থেকেই ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালিত হবে। এ অভিযানে ইফতারি পণ্যের পাশাপাশি শিশু খাদ্য, ফলমূল এবং কসমেটিকস অর্থাৎ প্রসাধনী পণ্যেরও মান পরীক্ষা করে দেখবে বিএসটিআই।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌসসহ মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, আগামী ১ মার্চ বা ২ মার্চ পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার কথা। এ উপলক্ষে আরও এক মাস আগে থেকেই বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং এর আওতায় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল প্রতিরোধ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধকল্পে চলমান মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রমে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রমজানে ঢাকা মহানগরীতে বিএসটিআইয়ের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও এপিবিএনের সহায়তায় ছুটির দিনসহ প্রতিদিন ৩টি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যথা- র্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএসটিআইয়ের সব বিভাগীয়, জেলা ও আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রতিদিন একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স টিমের অভিযান ও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এছাড়া রমজান মাসে আকস্মিকভাবে পরিচালিত অভিযানগুলোতে বিশেষ করে রোজাদাররা সচরাচর যেসব খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে থাকেন—ফ্রুট ড্রিংকস, ফ্রুট সিরাপ, মুড়ি খেজুর, সফট ড্রিংকস পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ভোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডুলস, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, লাচ্ছা সেমাই, পানি ইফতার সামগ্রীর বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে; এ ধরনের পণ্যে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা, যেমন- বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এসব অভিযানে অংশ নেবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি সময়ে সারা দেশে ৪৭১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে মামলা করা হয় ৪২৮টি, জরিমানা করা হয় ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৩ জনকে, কারখানা সিলগালা করা হয় ২৩টি। তাছাড়া ওজনে কারচুপির কারণে ৩৮২টি কোর্ট পরিচালনা করে ৬১৫টি মামলা করা হয়। এতে জরিমানা করা হয় ২ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩৯২টি পেট্রোল পাম্পের ইউনিট সিলগালা করা হয়।
এ ছাড়া অনলাইনে নকল ও অবৈধ পণ্য বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহ বন্ধে ইতোমধ্যে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে বিএসটিআই। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় ১৫টি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ক্রেতা ও ভোক্তাদের প্রতি বিএসটিআইয়ের অনুরোধ, অনলাইনে পণ্য কেনার আগে বিএসটিআই’র অনুমোদন নিশ্চিত হয়ে পণ্যের অর্ডার করুন। প্রয়োজনে বিএসটিআইর হটলাইন নম্বরে (১৬১১৯) ফোন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।