আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চরমোনাই মাহফিল, ১০ জনের মৃত্যু

এ.এ.এম হৃদয় | ১৭:১০, ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৫ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বরিশালে চরমোনাই দরবার শরিফের তিন দিনের বার্ষিক মাহফিল শেষ হয়েছে। শনিবার সকালে সাড়ে আটটায় চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের মোনাজাতের মাধ্যমে মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তিন দিনের মাহফিলে কীর্তনখোলা নদীর তীরে চরমোনাই দরবারে লাখো মুসল্লির সমাগম ঘটে। মাহফিলে আসা মুসল্লিদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত ও হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১০ জন মারা গেছেন। আখেরি মোনাজাতের আগে বয়ানে চরমোনাই পীর বলেন, ‘মানুষ আজ আল্লাহকে ভুলে অহরহ নাফরমানি করছে। অথচ একজন মানুষ কবরে গিয়ে মাফ না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিকৃষ্ট পশুর মতো মনে করা উচিত। তাই তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনের মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি নিয়ে কবরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর ভয় যাঁর অন্তরে নেই, তিনি আলেম, মুফতি বা পীর হলেও তাঁর কোনো মূল্য নেই।’ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘নিজেকে সব সময় ছোট মনে করতে হবে। আমিত্ব ভাব ও তাকাব্বুর পরিত্যাগ করতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থেকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। পরিবারের সবাইকে দ্বীনের শিক্ষা দিতে হবে এবং দ্বীন পালনের প্রতি যত্নবান হতে হবে।’ সংক্ষিপ্ত বয়ানে রেজাউল করীম মাহফিল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ওলামায়ে কেরাম ও গণমাধ্যমকর্মীদের মোবারকবাদ জানান। আখেরি বয়ানের পর তিনি বিভিন্ন লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন এবং মুরিদদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে তাওবা করিয়ে গুনাহ থেকে বাঁচার শপথ করান। আখেরি মোনাজাতে চরমোনাই পীর ফিলিস্তিন, ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, সিরিয়াসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন। আয়োজকেরা জানান, এবারের মাহফিলে মূল সাতটি বয়ানের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ সৌদি আরব, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিসর, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও তুরস্কের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম গুরুত্বপূর্ণ বয়ান প্রদান করেন। আখেরি বয়ান ও মোনাজাতের পর সকাল ১০টা থেকে মুসল্লিরা বাস, লঞ্চসহ বিভিন্ন বাহনে গন্তব্যে রওনা দেন। এতে বরিশাল নগরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা দুইটায় নগরের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দেখা যায়, পুরো সড়কে যানবাহন থমকে আছে। ব্যাপক যানজটের কারণে গাড়িগুলো সামনে এগোতে পারছে না। নথুল্লাবদা, চৌমাথা এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত এই যানজট থাকতে পারে। ১০ মুসল্লির মৃত্যু এদিকে মাহফিলে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ১০ জন বার্ধক্যজনিত ও হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছেন। তাঁরা হলেন মুন্সিগঞ্জের মো. আলাল খালাশি (৭২), পাবনার আবদুল জলিল খান (৬৫), গাজীপুরের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ব্যাপারী (৫০), চুয়াডাঙ্গার মো. ওসমান (৫০), নীলফামারীর মো. মঞ্জুরুল ইসলাম (৬০), চাঁদপুরের আলী আহম্মদ (৫৫), মো. আইউব আলী (৬০), বগুড়ার মো. আবদুল হামিদ (৬৫), নারায়ণগঞ্জের মো. আলতাফ হোসেন (৬৫), নরসিংদীর মো. আবুল কালাম (৪২)। মৃত ব্যক্তিদের জানাজা শেষে মাহফিল হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।