ভোলায় ৭ মাস পর বাড়ি গেলো শহীদ হাসানের ম’র’দে’হ

আল-আমিন | ২২:২২, ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৫ মিনিট

গত ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে গিয়ে শহীদ হন ভোলার মো: হাসান (২২) নামে যুবক। ৫ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিখোঁজ ছিলো হাসান। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে ঘুরেও হাসানের কোন সন্ধান পায়নি তার পরিবার। অবশেষে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মিলে হাসানের মরদেহ। গতকাল শুক্রবার হাসানের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর শনিবার সকালে গ্রামের বাড়ি ভোলার সদর উপজেলা কাচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাহামাদার গ্রামে জানাজা শেষে দাফন করা হয় হাসানকে। হাসান ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাহামাদার গ্রামের ব্যাপারি বাড়ির মো: মনির হোসেন ও গোলেনূর বেগম দম্পতির সন্তান ছিলো। এদিকে শনিবার সকালে হাসানের জানাজার আগে কান্না করতে করতে কয়েক দফা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তার মা গোলেনূর বেগম। কালুখালীতে ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সম্মেলন মো: হাসানের বাবা মো: মনির হোসেন ও মা গোলেনূর বেগম জানান, তাদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। হাসান তাদের দ্বিতীয় সন্তান। বাবা ও মা দুইজনই অসুস্থ্য। বাবা দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালালেও অসুস্থ্যতার কারণে ঠিকমত কাজ করতে পারতো না । তাই অভাবের কারণে পড়াশুনা বাদ দিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকা চাকরির জন্য যান হাসান। বেশ কয়েক বছর একটি দোকানে কর্মচারী থাকার পর কয়েক বছর আগে কাপ্তান বাজারের এরশাদ মাকের্টের নিজের বড় বোন শাহানাজ বেগমের জামাই মো: ইসমাইল হোসেনের ইলেকট্রনিক্স দোকানে চাকরি করতেন হাসান। হাসানের বেতনের টাকায় দিন মজুর বাবার সংসার চলতো। বাবা-মার চিকিৎসা, ছোট এক ভাই ও এক বোনের পড়াশুনা চলতো। গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন হাসান। লোকমূখে শুনেছে গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় হাসানকে ছাত্র-জনতার কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হাসপাতালে নিয়েছেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজাখুজি করে কোথায় ও মিলেনি হাসানের সন্ধান। অবশেষে জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেল মর্গে থাকা কয়েকটি অজ্ঞাত লাশের মধ্যে প্রাথমিকভাবে হাসানকে সনাক্ত করে তার পরিবার। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় হাসানের পরিচয় সনাক্ত হয়। এবং গতকাল শুক্রবার হাসানের মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকায় জানাজা শেষে শুক্রবার হাসানের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তার পরিবার। রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে মরদেহ। পরে শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে সাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে ১১ টার দিকে একই এলাকার আলমগীর মেম্বার বাড়ির দরজা মসজিদের পাশে করস্থানে দাফন করা হয় হাসানকে। তবে এই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খুনি পুলিশদের দ্রুত বিচারের দাবী করে তারা। হাসানের চাচা মো: নুরে আলম জানান, জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে প্রাথমিকভাবে তিনিসহ পরিবারের লোকজন হাসানের মরদেহ সনাক্ত করেন। পরে হাসানের বাবা-মা ডিএনএ পরীক্ষা করেন। এরপরই নিশ্চিত হন হাসানের মরদেহ। তিনি আরো জানান, হাসান অনেক ভালো ও শান্ত সভাবের ছেলে ছিলো। হাসানের হত্যাকান্ড কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না। হাসানের ভগ্নিপতি মো: ইসমাইল হোসেন জানান, তার দোকানে কয়েক বছর ধরে আছেন হাসান। সবার সাথে হাসানের ভালো সম্পর্ক ছিলো। আমি দোকানে না গেলেও হাসান ঠিকমত আমার ব্যবসা পরিচালনা করতো। হাসানকে আমি আমার আপন ছোট ভাইর মত দেখে রাখতাম। হাসান যেমন ভদ্র তেমনি সাহসী ছেলে ছিলো। জাতীয় নাগরিক কমিটির ভোলা জেলার সংগঠক মো: শাহাদাৎ খন্দকার জানান, জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার ও শহীদ পরিবারের পাশে সব সময় সরকারকে পাশে থাকার জন্য আমরা দাবী করছি। শহীদ পরিবারের সকল সুযোগ সুবিধা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে হাসানের দাফন শেষে পৌনে ১২ টার দিকে হাসানের কবরস্থানের সামনে থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ভোলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করা।