বরিশালে রাতের আঁধারে বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে রক্তাক্ত

এ.এ.এম হৃদয় | ২১:৫৪, ফেব্রুয়ারি ০৬ ২০২৫ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে ড্রেজার ব্যবসা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে রাতের আধারে এক যুবককে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডস্থ রুপাতলী জাগুয়া কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত হলেন শেখ সাদী (৪৫)। তিনি ২৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ হাওলাদারের ছেলে ও ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য। এ ঘটনায় গুরুত্বর আহত সাদীকে প্রথমে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও অবস্থা অবনতি হওয়ায় ঐদিন রাতেই ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তবে ভুক্তভোগী সাদীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। ভুক্তভোগী সাদী অভিযোগে জানান, নতুন হাট এলাকার মাদ্রাসা সংলগ্ন রিপনসহ আরও কয়েকজনের সাথে তুচ্ছ ঘটনায় ড্রেজার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অন্য একটি পক্ষের সাথে বিরোধের একপর্যায়ে সংঘাতের দিকে গড়ায় । উভয়েই বিএনপির। বিষয়টি জেনে আমি ও সাবেক ওয়ার্ড বিএনপি’র সম্পাদক এসে সমঝোতার চেষ্টা করি। এদিন রাতে আমি কালিজিরা থেকে রাত ১ টার দিকে বসুন্ধরা হাউজিং এলাকায় আমার বাসার দিকে মোটরসাইকেলযোগে যাচ্ছিলাম। ঐদিন খুব কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল সড়ক। এসময় কালিজিরা বাজার সংলগ্ন মাদ্রাসার সামনে গেলে আমাকে অশ্লীল মন্তব্য করে একজন বলে ওঠে ঐ যাচ্ছে’। ঐ থেকেই আমার পিছনে অভিযুক্তরা লক্ষ্য করে এগোচ্ছিল। কুয়াশাচ্ছন্ন হওয়ায় সেসময় আমি আর পিছনে তাকাইনি। এরপর আমি মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে রুপাতলী জাগুয়া কলেজের সামনে গেলে আমার পিছন থেকে ভারী অস্ত্র দিয়ে সজোরে আঘাত করলে আমি গাড়ি থেকে পড়ে যাই। তিনি বলেন, আঘাতে আমি সড়কেই লুটিয়ে পড়ি। সাথে সাথে আরও কয়েকটি মোটরসাইকেল ও একটি মাহিন্দ্রায় অস্ত্রসহ প্রায় ৮/১০ জন লোক এসে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। হামলায় অংশ নেয় রাকিব, রিপন, রিয়াজ ,সাইদুল, মাহবুব, মিথুন ও আরও কয়েকজন। তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা ওয়ার্ড বিএনপি’র খালেক ও জিয়ার অনুসারী বলেও জানান সাদী। একপর্যায়ে আমাকে কুপিয়ে সড়কে ফেলে যায় তারা। সাদী আরও বলেন, আমি একপর্যায়ে নিস্তব্দ হয়ে পড়ে থাকার অভিনয় করলে তারা আমার পায়ে আরও কয়েকটি কোপ দিয়ে সাথে থাকা ব্যবসার ৯৭ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার ডাক চিৎকারে স্থানীয় কয়েকজন ছুটে এসে সবাইকে খবর দিলে তারা হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলায় আমার হাত ও পায়ের ৬টি আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া দুই পায়ে গুরুত্বর জখম হয়েছে। আমি এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত বিচারের দাবি জানাই। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এছাড়া সুস্থ হয়ে ফিরে মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান তিনি। এদিকে এঘটনার পরপরই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ হয়ে বিচারের দাবি জানিয়ে ফুঁসে ওঠেছেন আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা ও স্থানীয়রা। এক ভুক্তভোগী ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী ফোরকান জানান, সাদীর ওপর হামলার পুর্বে আমার ওপর রিপন, রিয়াজ, কালু্‌, মজনুসহ আরও কয়েকজন মিলে আমাকে বেধরক মারধর করে তারা। অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে ড্রেজারের ব্যবসা করায় আমরা এর প্রতিবাদ করি। এর জের ধরে আমার ওপর হামলা করে তারা। অভিযুক্তরা এলাকাজুড়ে মাদকসহ বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। তারা একক আধিপত্য বিস্তার করে এলাকাজুড়ে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। এদিকে ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক- মহানগর যুবদলের সদস্য মাসুদ খান ও তার ছেলে হিমেলও রক্ষায় পায়নি অভিযুক্তদের হাত থেকে। মাসুদ খান অভিযোগে জানান, অভিযুক্তরা ওয়ার্ডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। তারা এককভাবে ওয়ার্ডে ড্রেজারের ব্যবসা করতে চায়। এছাড়া সহযোগী হিসেবে আওয়ামী লীগের লোকজনও যুক্ত রয়েছে। তাদের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে ও আমার ছেলে হিমেলকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় আমি বরিশাল বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলাও দায়ের করি। সেখানে তাদের শেল্টারদাতা জিয়াউর রহমান, খালেকসহ তাদের সহযোগী মুবিন, সাইদুল, রাজিব , রাকিব গাজীসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। এদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ । অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন মাসুদ খান। ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল গফফার মোল্লা অভিযোগে জানান, শেখ সাদীর মুঠোফোন থেকে আমাকে ঐদিন রাতে তার ওপর হামলার খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। কুপিয়ে রক্তাক্ত সাদীর নিস্তব্ধ দেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। দ্রুত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় ঢাকায় প্রেরণ করেন। তিনি জানান, মুলত ড্রেজার ব্যবসা নিয়ে দুইটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। আমি ও সাদীসহ কয়েকজন গিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করি। ওয়ার্ড বিএনপি’র জিয়া ও খালেকের নেতৃত্বে অভিযুক্তরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এর মধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগের লোক রয়েছে। তারাই সাদীর ওপর হামলা করেছে। তিনি অভিযোগে আরও জানান, ইতিপুর্বে অভিযুক্তরা ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক সুজন, ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য বাচ্চু ফরাজির ওপরও অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় তিনি মামলাও দায়ের করেছিলেন। মুলত এই বাহীনির অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ । এছাড়া আমাকেও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, প্রথমে দু’পক্ষ মুখোমুখী হয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। পরবর্তীতে অন্যত্র হামলার ঘটনা ঘটে জেনেছি। তখন অবহিত হয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।