ঝালকাঠিতে ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করায় প্রধান শিক্ষককে পিটুনি, পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর আদায়

এ.এ.এম হৃদয় | ২০:৪৩, জানুয়ারি ১৬ ২০২৫ মিনিট

ঝালকাঠির নলছিটিতে ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর আদায় করেছেন উত্তেজিত জনতা। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। আহত প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রীদের পেটানোর ঘটনায় উত্তেজিত জনতা প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এ ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসনের বিরোধ চলছিল। কমিটির সাবেক সদস্যরা আওয়ামীপন্থী থাকায় তাঁরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন। তাই জেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নতুন করে কমিটি করার নির্দেশনা দেয়। প্রধান শিক্ষক আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে সভাপতির নাম প্রস্তাব করে জেলা প্রশাসকের কাছে সম্প্রতি কমিটি দাখিল করে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবী আল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। গতকাল বুধবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমানের কাছে ছাত্র ও অভিভাবকেরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে প্রধান শিক্ষক কিছুটা ক্ষুব্ধ হন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছাত্রীদের অংশগ্রহণে নাচ-গানের মহড়া চলছিল। দুপুরে প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নাচের মহড়ায় ভুল করার অজুহাতে আটজন ছাত্রীকে বেত দিয়ে পেটান। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কয়েকজন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে অভিভাবক ও এলাকাবাসী ছুটে আসেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে প্রধান শিক্ষক নিজের কক্ষ বন্ধ করে বসে থাকেন। এদিকে ঘটনা জানতে পেরে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম ও থানা থেকে পুলিশ ছুটে আসে। পরে প্রধানশিক্ষক নিজ কক্ষ থেকে বের হতেই উপস্থিত লোকজন তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম তাঁকে নিজের গাড়িতে তুলে নেন। পরে জনতা তাঁর গাড়ি অবরুদ্ধ করে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। আহত সাত শিক্ষার্থী ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তারা সবাই সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুলতানা সোনিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছে। ওদের প্যানিক কেটে গেলে সুস্থ হয়ে যাবে।’ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির আহত ছাত্রী জান্নাতী বেগম বলেন, ‘আমাদের নাচের মহড়া চলা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক স্যার ভুল হওয়ার অজুহাতে হঠাৎ বেত দিয়ে পেটানো শুরু করেন। এতে অনেক ছাত্রী আহত হয়। অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।’ ঝালকাঠি বারের বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদপ্রত্যাশী আল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছাচারী হয়ে আওয়ামীপন্থী লোক দিয়ে বিদ্যালয়ের কমিটি করতে চায়। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। জনতা তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসনকে আহত অবস্থায় নিজের গাড়িতে করে প্রথমে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে চিকিৎসকেরা সেখান থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এ সময় প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসন বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে অন্যায়ভাবে লাঞ্ছিত করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।’