বরিশালে বাতিল হচ্ছে ৬০ হাজার ভুয়া টিসিবি কার্ড
চার মাস পর ডিসেম্বরের শেষের দিকে শুরু হয়েছে টিসিবির স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রয়। এ কারণে বরিশাল নগরী থেকে শুরু করে জেলার প্রতিটি উপজেলায় লাইন ধরে পণ্য সংগ্রহ করছেন উপকারভোগীরা। তবে চলতি মাস থেকে টিসিবি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিতরণের ক্ষেত্রে বাদ যাবে ভুয়া তথ্য প্রদানকারীরা।
সে ক্ষেত্রে মোট উপকারভোগীদের চার ভাগের তিন ভাগ বাদ যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) বরিশাল কার্যালয় সূত্র।
ভুয়া তথ্যের টিসিবি কার্ড বাতিলের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন উপকারভোগীরা। সে ক্ষেত্রে যারা দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছেন তাদের নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে।
বরিশাল নগরীতে মোট উপকারভোগী রয়েছে ৯০ হাজার। এর মধ্যে ৬০ হাজারের স্মার্ট কার্ড আসেনি। এছাড়া জেলার ১০ উপজেলায় বর্তমানে উপকারভোগীর সংখ্যা এক লাখ ২৯ হাজার ৯২১ জন। ৯১ জন ডিলারের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে তিনটি পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল ও ৫ কেজি চাল যার বাজার মূল্য প্রায় ৯০০ টাকা। উপকারভোগীরা তা পাচ্ছেন মাত্র ৪৭০ টাকায়।
নগরীর চাঁদমারী এলাকায় টিসিবির পণ্য উত্তোলন করতে আসা কাসেম, বাদলসহ একাধিক উপকারভোগী বলেন, ভুয়া তথ্যের কারণে একটি পরিবারে চার থেকে পাঁচটি কার্ড রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যারা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল সেই পরিবার থেকে শুরু করে তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও এভাবে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এ কারণে প্রকৃত দরিদ্ররা টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না।
বিশেষ করে ৩০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের হাতে এ কার্ড থাকায় তারা তাদের ইচ্ছেমত কার্ড বিতরণ করেছেন। তারা এ কার্ড দিয়ে ভোটার বাগিয়েছেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন নামে কার্ড করে তা তাদের কাছে রেখে দেন। পরে তারা সেই কার্ড নিকটজনকে অথবা অর্থের বিনিময় বিক্রি করেন। এ কারণে যারা এ পণ্য পাওয়ার উপযোগী ছিল তারা না পেয়ে যারা তিনবেলা বাজার করে চলেন তাদের ঘরে গেছে।
তাদের অভিযোগ, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতারাও এ কার্ড বাণিজ্যে মেতে ছিলেন। এ কারণে ভুয়া তথ্যে বেশি কার্ড বিতরণ হয়েছে। বর্তমান সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটির সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা। ওই সব ভুয়া কার্ড বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যারা এতদিন কার্ড পাননি সেই ধরনের দরিদ্র পরিবারে একটি করে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার দাবি তোলেন।
চাঁদমারী এলাকার ডিলার মিজানুর রহমান জানান, তার অধীনে বর্তমানে ২১০০ উপকারভোগী কার্ডধারী রয়েছেন। এ মাসে মাত্র ৬০০ উপকারভোগী স্মার্ট কার্ডের অধীন পণ্য পাবেন। এর মূল কারণ হচ্ছে, বেশির ভাগ কার্ডে ভুল তথ্য দেওয়া। আবার অনেক কার্ডের ঠিকানা ভুল, এমনকি পিতার নামও সঠিক না। এ ছাড়া একই পরিবারে একাধিক কার্ডের সন্ধান পেয়েছে তথ্য যাচাইকারীরা। এ কারণে ওই সব কার্ড বাতিল করে ৬০০ কার্ড অনুমোদন পেয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
নগরীর ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিব আরাফাত জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডে তিন শতাধিক কার্ড ছিল। যাচাই-বাছাইতে বেশিরভাগ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু কার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তা বিতরণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। কার্ড বাতিলের খবরে তার সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করছেন- বাতিল হলে কীভাবে কার্ড করা যাবে। বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানিয়ে দেন। এ কার্ড আসার পর যারা সত্যিকারার্থে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে তাদের পরিবার থেকে আবেদন সংগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কার্ড দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ বিষয়ে টিসিবি বরিশালের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী শতদল মন্ডল বলেন, এ মাস থেকে স্মার্টকার্ডে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু হবে। এতে কাজটি আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। স্মার্ট কার্ড করার আগে উপকারভোগীদের তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যাচাইয়ে বেরিয়ে এসেছে একই পরিবারের একাধিক কার্ড। নামে-বেনামে কার্ড থাকায় তিন ভাগের দুই ভাগ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে যাদের সঠিক পাওয়া গেছে তাদের নামেই স্মার্টকার্ড তৈরি হচ্ছে। স্ব-স্ব ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সচিবদের মাধ্যমে এ কার্ড বিতরণ করা হবে।