নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ একরে পর এক বিতর্কীত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে বরিশাল জিলা স্কুলের কতিপয় শিক্ষক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্কুলটির অভিভাবকগন। এমনকি শেখ মুজিবকে নিয়েও বিতর্কীত প্রশ্ন করেছেন এক শিক্ষক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৪র্থ শ্রেনির বাংলা বিষয়ের প্রশ্নপত্রে শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বপ্রদানকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন ধরনের প্রশ্ন প্রনয়নে স্কুলটির অন্যান্য শিক্ষকগন আপত্তি জানালেও রহস্যজনক কারনে ওই প্রশ্ন বহাল রাখেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী হালদার। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিং বানিজ্য চালাতে অপেক্ষাকৃত জটিল ও সিলেবাস বর্হিভূত প্রশ্ন প্রনয়ন করেছেন কতিপয় শিক্ষক। অভিভাবকগন অভিযোগ করেন ৪র্থ শ্রেনীর বাংলা, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ইসলাম শিক্ষা, ৭ম শ্রেনীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে রহস্যজনক প্রশ্ন প্রনয়ন করা হয়েছে। এসব জটিল ও সিলেবাস বর্হিভূত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গলদঘর্ম হতে হয়েছে। যেহেতু বার্ষিক পরীক্ষা তাই ফলাফল নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পরে গেছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা আরো অভিযোগ করেন যে, শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করতে এধরনের প্রশ্ন করেছেন কতিপয় শিক্ষক। অনুসন্ধানে জানা যায় ৪র্থ শ্রেনির বাংলা বিষয়ের প্রশ্নটি করেছেন প্রভাতি শাখার শিক্ষক মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, যিনি শেখ মুজিবকে নিয়ে ওই প্রশ্ন করেছেন। জানা যায়, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বাগিয়ে নিয়েছিলেন শিক্ষক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদ। মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন শারিরীক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হওয়া সত্বেও প্রায়শই দেরিতে স্কুলে আসেন। যে কারনে প্রভাতি শাখার প্রাত্যহিক সমাবেশ নিয়মীত অনুষ্ঠিত হয় না। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, স্কুলের বিএনসিসির দায়িত্ব পালনের সময় ব্যাপক আর্থীক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাকে শোকজ করে বিএনসিসি কর্তপক্ষ। এক পর্যায়ে তাকে বিএনসিসি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এছাড়াও ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষক থাকাকালীন ছাত্রদের তার কাছে কোচিং করতে বাধ্য করতেন। এমনকি তার কাছে কোচিং করা শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর পেতে পরীক্ষার খাতায় বিশেষ কোড ব্যবহার করার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে তাকে ওই শ্রেনী শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই শিক্ষক সদা-সর্বদা বিদ্যালয়টির ছাত্র-শিক্ষক কিংবা অভিভাবকদের সাথে বেপরোয়া আচরন ও দুর্ব্যবহার করে থাকেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ সোহরাব হোসেনকে একাধীকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অপরদিকে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ইসলাম শিক্ষা ও ৪র্থ শ্রেনির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে একইভাবে জটিল ও কঠিন প্রশ্ন প্রনয়নের করা হয়েছে। যেখানে সিলেবাস বর্হিভূত বিষয়, সুরা দিয়ে বানানো শুন্যস্থান পূরন করার মত অসংখ্য জটিল প্রশ্ন সন্নিবেশ করা হয়েছে। ওই দুই শ্রেনির প্রশ্ন প্রনয়নকারী ছিলেন প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান সরদার। যার বিরুদ্ধেও কোচিং করা শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অপারধে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে শ্রেনী শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে সড়িয়ে দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করলে প্রশ্ন প্রনয়নের বিষয়টি অস্বীকার করে বারবার রির্পোটারকে দেখা করতে অনুরোধ জানায়।
শেখ মুজিবকে নিয়ে বিতর্কীত প্রশ্ন এবং জটিল ও সিলেবাস বর্হিভূত প্রশ্ন প্রনয়নের ব্যাপরে বরিশাল জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী হাওলাদার বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকদের কর্মকান্ডের দায় কিছু ক্ষেত্রে আমাকেই নিতে হবে তবুও ওই সকল অভিযুক্ত শিক্ষকদের ইতোমধ্যে কারন দর্শাতে বলা হয়েছে। তবে বিতর্কীত প্রশ্নের জন্য শিক্ষার্থীদের কমন নম্বর দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, অভিযোগগুলো গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং অতি শীঘ্রই জিলা স্কুলের শিক্ষকদের সাথে স্কুলটির সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।