শেবাচিমে বন্ধ থাকা তিনটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলে দেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
আল-আমিন|২০:০৯, ডিসেম্বর ১৪ ২০২৪ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক : রোগীদের ভোগান্তি লাঘবে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে বন্ধ থাকা তিনটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলে দেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষার্থীরা। সেইসাথে কুচক্রিমহলের চক্রান্ত রুখে দিয়ে রক্তদান এবং ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে গড়ে ওঠা এ ক্লাব তিনটি গঠনতন্ত্র মেনে পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব ও যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্লাবের সদস্যদের উপস্থিতিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সন্ধানী ক্লাবের বর্তমান কমিটির সদস্য জিসান হোসেন আদদীন বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ বর্তমানে রক্তদান এবং ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে ৩ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী,মেডিসিন ক্লাব,যুব রেড ক্রিসেন্ট এর কার্যক্রম চলমান। সবগুলো ক্লাবই অরাজনৈতিক এবং স্ব স্ব সংবিধান এবং নির্দিষ্ট গঠন তন্ত্র অনুযায়ী নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক রোগী এসব সংগঠন থেকে সেবা পেয়ে থাকে। মেডিকেল এবং ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের দের স্বেচ্ছাসেবায় এসব সংগঠন পরিচালিত হয়। অরাজনৈতিকতা এবং গঠনতান্ত্রিক নিয়মে পরিচালনার জন্য প্রায় ৩০-৩৫ বছর যাবত এই ক্লাব গুলো রোগীদের প্রয়োজন অনুসারে রক্তের যোগান দিয়ে গিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের সময়েও আহত মানুষের রক্ত প্রদান,প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, ওষুধ প্রদান, মেডিকেল টিম গঠন করে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।আন্দোলন পরবর্তী সময়েও ক্লাবের কার্যক্রম নির্দিষ্ট গতিতে বহমান ছিলো। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ব্যাচ এর প্রফেশনাল পরীক্ষা চলমান থাকার সুযোগ নিয়ে এই কুচক্রী মহল ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করে।
গত ৮ই ডিসেম্বর তারা পরিচালক স্যারের সাথে দেখা করে ক্লাবগুলো রিফর্ম করার ব্যাপারে। যাতে তারা প্রস্তাব করে সিনিয়র ব্যাচ হিসেবে শুধু মাত্র ৫১তম (পঞ্চম বর্ষ) ব্যাচের ভোটের মাধ্যমে ক্লাবের পরবর্তী কমিটি নিশ্চিত হবে যেথানে ক্লাবের পূর্ববর্তী মেম্বার নন মেম্বার সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারবে।কিন্তু ক্লাবে সকল ব্যাচের অংশগ্রহণ থাকে। যার ফলে অন্যন্য ব্যাচের ভোটিং রাইট ক্ষুন্ন হয়। এবং এরকম নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ন সাংবিধানিক গঠনতন্ত্র বিরোধী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ই ডিসেম্বর সকল ক্লাবের মেম্বাররা পরিচালক স্যারের সাথে দেখা করেন। যেখানে তারা দাবি জানায় ক্লাব রিফর্মের প্রয়োজন হলে সেটা পরিচালক স্যারের তত্ত্বাবধানে ক্লাবের সংবিধান অনুযায়ী গঠনতন্ত্র মেনে পুনর্গঠন করা হবে এবং অনুরোধ করা হয়যাতে সংবিধান বহির্ভূত কোন প্রকার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হয়। এই ব্যাপারে তখন পরিচালক স্যার ক্লাবের কাজ ক্লাব মেম্বারদের মাধ্যমে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো সদস্যদের আবেগের জায়গা। প্রথম বর্ষ থেকেই মানবসেবার উদ্দেশ্যে সংগঠন গুলোর কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু সম্প্রতি ক্যাম্পাসে একটি অংশ যারা কথনোই সংগঠন এর কার্যক্রম এর সাথে জড়িত ছিল না তারা ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় এই ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে আবার ১২ই ডিসেম্বর এই কুচক্রী মহলের ১০-১৫জন মিলে সাধারণ শিক্ষার্থী নাম দিয়ে স্যারের সাথে কথা বলে। কিন্তু সেখানে বর্তমান শিক্ষার্থী ব্যতীত আরো সিনিয়র উপস্থিত ছিলো।যাতে তারা আবারো গঠনতন্ত্রের বাইরে নতুন নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি করে অথবা ক্লাব বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানায়। স্যার সেখানে বলেন,ক্লাবের কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের। এর পরবর্তীতে তারা ক্লাবে উপস্থিত থাকা ক্লাব মেম্বারদের ভয় ভীতি দেখিয়ে বের করে দিয়ে এবং ক্লাবে নিজেদের তালা মেরে দেয়।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ডা.রিজভী (৪৯তম ব্যাচ), সাব্বির (৫০ তম), আরাফাত (৫১ তম),মশিউর(৫১ তম), এনামুল (৫১তম) গোলাম রাব্বানী সাফওয়ান(৫১ তম), নাজমুস সাকিব (৫১তম), হাসান রেজা (৫১তম), ইখতিয়ার(৫১তম),কিরন(৫২তম), আতিকুর(৫২ তম),ইসমাইল(৫২ তম) যারা জড়িত ছিলো। এরপর প্রায় ২/৩ ঘন্টা ক্লাব কার্যক্রম বন্ধ থাকে।যাতে করে অনেক ইমার্জেন্সী রোগীরাই ভোগান্তিতে পরে। কুচক্রী মহলের এই হঠকারিতার কারনে সংগঠন এর সকল ব্যাচ এর সদস্য শুরু থেকেই এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ক্যাম্পাসে আপত্তি জানিয়ে আসছে।সংগঠন এর সদস্য দের সাথে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা না করে সংগঠন গুলোয় তালা দেওয়ার মত এহেন ঘৃন্য কাজে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সবাই। ক্লাবের সদস্যদের দাবী তারা তাদের আবেগের এই জায়গা কোনো কুচক্রী মহলের হাতে তুলে দেবে না।কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তারা চায়না। তারা এসে ভালা গুলো খুলে দিয়ে যেন যায় সদস্যরা সেই প্রস্তাব ও করে। যদি না মানে তাহলে সংগঠন এর সদস্য রা যা চাইবে তা হবে।সংগঠন চলবে গঠন তন্ত্র মেনে। কোনো ধরনের পরিবর্তন-পরিমার্জন প্রয়োজন হলে সংগঠনের উপকমিটি, কার্যকরী পরিষদ এবং উপদেষ্টা পরিষদ তথা আলাদা গঠনতন্ত্র আছে। সে মোতাবেক সব কিছু চলবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের সমাধানে না এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাওয়া শিক্ষার্থী দের অংশ ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। যার ফলে সকল ক্লাবের মেম্বাররা মিমাংসার মাধ্যমে ক্লাবের তালা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তালা ভেঙে পুনরায় ক্লাব কার্যক্রম শুরু করেন এবং সেখানে অপেক্ষমান রোগীদের রক্ত প্রদান করে। পরবর্তীতে উত্তেজনা প্রশমনে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মশিউল মুনীর হাসপাতাল করিডোরে যেখানে ক্লাব গুলি অবস্থিত সেই করিডোরে তালা দিয়ে দেন। এর ফলে গত দুইদিন সকল ক্লাব কার্যক্রম সম্পূর্নরুপে বন্ধ থাকে। যাতে করে রোগীরা গত দুইদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।কারণ আপনারা জানেন,শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী সার্জারি, গাইনী এবং মেডিসিন ইউনিটে ভর্তি হন যাদের ইমার্জেন্সী রক্তের প্রয়োজন।
যেহেতু অধিকাংশ রোগীরা দূর দূরান্ত থেকে আসেন তাদের রক্ত দেয়ার মত কোনো ডোনার থাকে না।থাকলেও রোগীর ব্লাড গ্রুপের সাথে ম্যাচ করে না।ক্লাব গুলো এখানে রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্লাড গ্রুপের ব্লাড প্রদান করে থাকে। যাতে করে অনেক ইমার্জেন্সী রোগীকে বাচানো সম্ভব হয়। প্রতিদিন ৩টি ক্লাবের মাধ্যমে প্রায় ১৫০-২০০ ব্যাগ রক্ত রোগীদের সরবরাহ করা হয়। ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত দুইদিন এই রক্তের ব্যবস্থা করতে রোগীদের দালালের খপ্পরে পরতে হচ্ছে এবং অধিকাংশ সময়েই রক্তের ব্যবস্থা করা সম্ভপর হচ্ছে না।যার ফলে রোগীদের জীবন বাচানো এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাই রোগীদের এই ভোগান্তি কমাতে ক্লাব গুলোকে পুনরায় খোলা খুব জরুরী। তাই পুনরায় ক্লাবগুলো খোলার জন্য নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ দাবির সাথে একমত পোষন করে যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্য তীর্থ মণ্ডল ও মেডিসিন ক্লাবের সদস্য সাজিদ আল ইভান বলেন, আমরা এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা জীবন থেকেই রোগীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলি। সেবামূলক এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষ থেকেই নিজ ইচ্ছেতে যুক্ত হয়। এখানে কোন রাজনৈতিক বিষয় থাকে না।
সন্ধানীর আরেক সদস্য আব্দুল্লাহ আল ফাহিদ বলেন, এসকল সংগঠনে যুক্ত হতে হলে অরাজনৈতিক আর সেচ্ছাসেবী মনোভাব নিয়ে প্রথম বর্ষ থেকেই সম্পৃক্ত হতে হয় শিক্ষার্থীদের। পরে যদি কেউ রাজনৈতিক ব্যানারে চলে যায় তার বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এখন একটি মহল বিভিন্ন কথা বলে সংগঠনগুলোর সদস্যদের কোনঠাসা করার চেষ্টা করছে তাদের ফায়দা লোটার জন্য। আর এ সংগঠনগুলো সংগঠনের নিয়মানুযায়ী পুর্ণগঠিত হয়, যারমধ্যে অনেকগুলোর পুনরগঠনের কাজ চলমান রয়েছে তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কারনে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তারমাঝেই ওই মহল ক্লাবগুলো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছে।