বরিশালে বনভূমি যাচ্ছে ২০ ইটভাটার পেটে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:২৫, ডিসেম্বর ১৩ ২০২৪ মিনিট

বরিশালের মুলাদীতে ২০টি ইটভাটায় খনিজ কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ভাটায় নামমাত্র কয়লা থাকলেও চুল্লিতে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এতে ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, একই সঙ্গে উপজেলার বনভূমির পরিমাণও কমছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে ভাটামালিকদের দাবি, কয়লা কেনায় খরচ বেশি হওয়ায় কাঠ পোড়াচ্ছেন তাঁরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ইটভাটা কিংবা সংলগ্ন এলাকায় মালিকেরা করাতকল (সমিল) বসিয়ে নিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত কম দামে কাঠ কিনে সমিলে চেরাই করে সহজেই ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করেন তাঁরা। কয়লার দাম বেশি এবং কাঠের দাম কম হওয়ায় মালিকেরা কয়লা ব্যবহার করেন না বলে দাবি করেছেন ইটভাটার শ্রমিকেরা। অনেক মালিক নামমাত্র কয়লা এনে ভাটায় রাখলেও কাঠ দিয়েই পোড়াচ্ছেন ইট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটামালিক বলেন, খনিজ কয়লা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় পাওয়া গেলেও ব্যয়বহুল ও পরিবহন খরচ বেশি হয়। ১ টন কাঠের দাম যেখানে ৫-৬ হাজার টাকা, সেখানে ১ টন কয়লার দাম প্রায় ২৪-২৫ হাজার টাকা। তাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অনেকটা সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য। তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রায় ভাটাতেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। কয়লা দিয়ে পোড়ালে প্রতি হাজার ইট কমপক্ষে ১৩ টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর কাঠ দিয়ে পোড়ালে প্রতি হাজার ইট ৯ হাজার টাকার বিক্রি করা সম্ভব। ক্রেতারা কম দামে ইট পেলে বেশি দামে কিনবেন না। গলইভাঙা গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, গলইভাঙা বাজার এলাকায় ২-৩টি ড্রাম চিমনির ইটভাটা রয়েছে। কম উচ্চতার চিমনির ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় ঘরবাড়ি, বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কাশি-শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি এলাকায় কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন। মুলাদী উপজেলায় সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন মিলিয়ে ৮-৯ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ালে বনভূমি আরও কমে যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ইটভাটায় সমিল স্থাপন করা এবং কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ইটভাটার আইন অমান্য করে মালিকেরা কাঠ পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছুদিনের মধ্যে ঢাকা থেকে বিশেষ একটি টিম নিয়ে মুলাদী উপজেলায় অভিযান চালানো হবে।