বরিশাল স্পিডবোট ঘাটে নৈরাজ্য, ২০০ টাকার চাঁদা এখন ৭০০!
বরিশাল থেকে দ্বীপ জেলা ভোলায় সরাসরি সড়কপথ না থাকায় বাধ্য হয়েই নদীপথে যাতায়াত করে থাকেন এসব জনপদের মানুষ। এসব রুটে ফেরি ও লঞ্চ প্রধান বাহন হলেও সময় স্বল্পতার কারণে স্পিডবোটে যাতায়াত করেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম এ রুটের লঞ্চগুলোতে যেমন নেই, তেমনি স্পিডবোটগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বরং দ্রুতগতির যান হওয়ায় যে ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেট থাকার কথা তা বেশিরভাগ স্পিডবোটেই দেখা যায় না। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।
তবে বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেড সংগঠনটি রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রন হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এরআগে এই ঘাট নিয়ন্ত্রন করতেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা। এরপর তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের মেয়রের আসনে বসলে ওই ঘাট দখলে নেন তার অনুসারীরা। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতি-মারধরের ঘটনাও ঘটে। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেই ঘাট দখলে নেন বিএনপি ঘড়নার বেশ কিছু স্পিডবোট মালিক। এসেই ঘাটে নৈরাজ্য গড়ে তোলেন তারা। বিগত সময়ে নৈশ প্রহরী ও লাইন ম্যানের নামে মাসে স্পিডবোট প্রতি ২০০ টাকা নেয়া হলেও সেটি এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০০ টাকায়। ঘাট উন্নয়নের নামে এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি মিলন শেখ ও সাধারন সম্পাদক অহিদুল আলম। এই বাড়তি টাকা নেয়ার কারণে অধিকাংশ স্পিডবোট মালিকরা তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই এই ঘাটে বৈধ-অবৈধতার বালাই না মেনে প্রতিনিয়ত চলছে কাগজপত্রবিহীন বা ফিটনেস বিহীন স্পিডবোট। এমনকি সন্ধ্যার পরে বোট চালনা বন্ধ রাখার কথা থাকলেও হরহামেশাই চলছে স্পিডবোট। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে সংগঠনের আওতায় ১০৮টি সিরিয়াল স্পিডবোট ভোলা রুটে যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। বোট প্রতি ৭০০ টাকা উত্তোলন করলে সে হিসেবে মাসে প্রায় ৭৫ হাজার ৬ টাকা উত্তোলন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্পিডবোট মালিক বলেন- আগেই ভালো ছিলাম। আগে ২০০ টাকা দিয়ে রক্ষা হতো, এখন সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০০ তে। এমনিতেই তেলের দাম বাড়তি এর উপরে মাসে ৭০০ টাকা দেয়াটা বেশি চাপের হয়ে যায়। এ টাকা নিয়ে নেতাদের উন্নয়ন হবে কিন্তু ঘাটের উন্নয়ন হবে না লিখে রাখেন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মিলন শেখ বলেন- ৭০০ টাকা করেই নেয়া হয়। বিগত দিনে ঘাটে কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। এই টাকা দিয়ে ঘাটের উন্নয়ন কাজ করা হবে। আপনি (প্রতিবেদক) কাল সন্ধ্যায় আইসেন একসাথে চা খাবো।
বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারন সম্পাদক অহিদুল আলম বোট প্রতি ৭০০ টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- কি করবো ভাই বলেন। এরআগে ঘাটের কোন কাজ হয়নি। আমরা সকল বোট মালিকদের সাথে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে কারো অপত্তি ছিল না।
তিনি আরও বলেন- আমরা মাত্র এক মাস টাকা তুলেছি। কত টাকা তুলেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- হিসেব করা হয়নি। বসার কথা ছিল কিন্তু বসতে পারিনি। তবে মজার বিষয় হলো তিনি যেই সংগঠনটির সাধারন সম্পাদক সেই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের সংখ্যা জানেন না।
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্পিডবোটের গতি নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নানা দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।