যৌতুকলোভী স্বামীর বর্বরতার শিকার স্ত্রী, হাসপাতালে ভর্তি, থানায় অভিযোগ
বরিশাল শহরের মহবাজ এলাকায় আসমা আক্তার নামের এক নারী যৌতুকলোভী স্বামীর ধারাবাহিক বর্বরতার শিকার হয়েছেন। পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বধূ স্বামীর চাহিদা অনুযায়ী ৫ লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে আনতে ব্যর্থ হলে তার ওপর দফায় দফায় অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
এমনকি নীপিড়ন সহ্য করতে না পেরে আসমা তার ছোট সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি শহরের অপর প্রান্ত রূপাতলীর ধানগবেষণা রোডে আশ্রয় নিয়েও নিস্তার পাননি। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) শ্বশুরালয়ে হানা দিয়ে কুলাঙ্গার হিরার সেই টাকা দাবি এবং তা না পেয়ে দুই সন্তানের জননীকে বেদম পিটুনি দিয়ে এক ভয়াত্মক পরিবেশ তৈরি করেন।
আসমা এবং তার মা সহ স্বজনদের ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসার আগেই হিরা পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নারীকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ অকথ্য নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আসমাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেখেছে বলে জানা গেছে।
সন্তানকে নির্যাতনের এই ঘটনায় একদিন বাদে রোববার (০৭ ডিসেম্বর) জামাতার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছেন শাশুড়ি চম্পা বেগম। অভিযোগে উল্লেখ আছে, শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের মহাবাজ পুলসংলগ্ন মৃত তারা মিয়ার সন্তান ও শহরের হাসপাতাল রোড এলাকার ব্যবসায়ী ইবরাহিম মিয়া হিরার সাথে সামাজিক রীতি মেনে বছর দশেক আগে আসমার বিবাহ দেওয়া হয়।
ওই সময় স্বর্ণালঙ্কারসহ বাসার গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্রও দেওয়া হয়। ১০ বছরের সংসারে তাদের দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে, বড় ছেলের বয়স ৭ বছর এবং ছোট ছেলে এক বছরের। অভিযোগ, প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণের পর থেকে হিরা যৌতুক বাবদ ৫ লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে এনে দিতে চাপপ্রয়োগসহ স্ত্রী আসমাকে মারধর করতেন।
ধারাবাহিক নির্যাতনের মধ্যেই দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেন নারী। এরপরেও যৌতুকের দাবিতে চলে নির্যাতন। উপায়ন্ত না পেয়ে আসমা নির্যাতিতা আসমা ছোট ছেলেকে নিয়ে ৬ ডিসেম্বর ধানগবেষণা রোডে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
কিন্তু একদিন বাদে সেখানে গিয়েও নারী নির্যাতনের এক ভয়াত্মক রূপ প্রকাশ্যে আনলেন হিরা। প্রত্যক্ষদর্শী সেই নির্যাতনের বর্ণনায় জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৮টার দিকে হিরা শ্বশুর বাড়িতে আসেন এবং স্ত্রী আসমার কাছে যৌতুকের ৫ লাখ টাকা ফের দাবি করেন। এনিয়ে উভয়ের মধ্যেকার বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে আসমাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে দেন হিরা।
একপর্যায়ে আসমা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্বজনদের ডাক-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন। তখন হিরা সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। পরক্ষণে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আসমাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়া হয়।
স্বামীর বর্বরতার বর্ণনা শুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিলে আসমার স্থান হয় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। শেবাচিমের চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, এলোপাতাড়ি পিটুনিতে আসমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। এবং পূর্বে নির্যাতনেরও আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া তিনি চিকিৎসার অভাবে আরও কিছু রোগে ভুগছেন।
গৃহবধূর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। এই ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে স্বজনদের পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। মূলত পুলিশের পরামর্শের আলোকে আসমার মা পঞ্চাশোর্ধ্ব চম্পা বেগম বাদী হয়ে জামাতা হিরার বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ধানগবেষণায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগটি উপ-পরিদর্শক মদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে, এই ঘটনায় পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে, জানান ওসি।