আজ ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশাল থেকে পালিয়ে যাওয়ায় মুক্ত হয় শহর। নগরীর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন মুক্তিসেনারা। সর্বত্র ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্বাধীনতা ঘোষণার এক মাসের মাথায় ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল সড়ক ও নৌপথে আক্রমণ এবং সেনা নামানোর মাধ্যমে বরিশাল শহর দখল করে নেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। শহরের দক্ষিণাঞ্চলে থাকা ওয়াপদা কলোনির ভেতর ঘাঁটি বানায় তারা। চারদিকে গড়ে তোলে নিরাপত্তা বাঙ্কার। এই কলোনিতে অবস্থান করে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ চালায় দখলদাররা।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্র হলে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ৭ ডিসেম্বর রাত থেকে শহরে জারি করা হয় অনির্দিষ্টকালের সান্ধ্য আইন। ৮ ডিসেম্বর সকালে জেলা প্রশাসকের দফতরে এক বৈঠকে মিলিত হয় তারা। শহরে কারফিউ চলাকালে সকাল ১০টায় বৈঠক শেষ করেই পাকিস্তানি বাহিনী বরিশাল ছেড়ে নৌ-পথে পালানোর উদ্যোগ নেয়।
খবর পেয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী পলায়নরত পাকিস্তানি বাহিনীর গানবোট, স্টিমার ও লঞ্চ লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর স্থানীয় প্রধান সহযোগী শাজাহান চৌধুরীসহ তাদের বহু দোসর নিহত হয়।
অন্যদিকে, সকাল ১০টা থেকে রায়পাশা-কড়াপুর এলাকা থেকে বেজ কমান্ডার রেজায়ে সাত্তার ফারুকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল শহরের দিকে প্রবেশ করতে থাকে। সাগরদী-দপদপিয়া এলাকা থেকেও মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নানের নেতৃত্বে অপর একটি দল শহরে প্রবেশ করে। বেজ-কমান্ডার সুলতান মাস্টারের নেতৃত্বেও একটি দল শহরে ঢুকে পড়ে। বিকাল ৩টায় মুক্তিযোদ্ধাদের সুইসাইডাল স্কোয়াড শহরে ঢোকে। মুক্তিযোদ্ধারা বরিশাল কোতোয়ালি থানা, কালেক্টরেট ভবন ও জেলখানা দখলে নেয়।
এরপর কালেক্টরেটের একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি জিপে করে শহরে বিজয়ের বার্তা প্রচার করতে থাকে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
এদিকে, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার এনায়েত হোসেন চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।