বাউফলে হাসপাতাল স্টাফের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ মামলার চার্জশীট

আল-আমিন | ২১:০৭, ডিসেম্বর ০৩ ২০২৪ মিনিট

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক মো. নাসির খানের (৩৬) বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র (চার্জশীট) দাখিল করেছে পুলিশ৷ এরপর থেকে এই সরকারি কর্মচারীর হুমকিতে বাড়ি ছাড়া ধর্ষণের স্বীকার তরুণীর পরিবার। নাসির খানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রæতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা। আদালতে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, বাউফল পৌরসভার দাশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী তরুণী (২১)। কয়েকবছর আগে তার বিয়ে হয়েছিলো। স্বামীর সাথে মনমালিন্য হওয়ায় তিনি বাবার বাড়িতেই বেশি থাকতেন। এই সুযোগে ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী ও আত্মীয় বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক নাসির খান তাকে প্রতারণা মূলক ভাবে কুপরামর্শ দেয়। নাসিরের কথা মতো ভুক্তভোগী স্বামীর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেন। পরে আসামী নাসির খান তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি পরিবারের কাছে প্রকাশ্য হলে আসামী নাসির ভুক্তভোগীকে বিয়ে করবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে ভুক্তভোগী তরুণী ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর পটুয়াখালী আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করলে আদালত বাউফল থানার ওসিকে মামলা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয় আদালত। ওই বছর ৭ ডিসেম্বর নাসির খানের বিরুদ্ধে বাউফল থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে মামলা রুজু হয়। দীর্ঘসময়ের তদন্ত কালে বাউফল থানার ৭ ডিসেম্বরের মামলা নং ৯ এবং পরবর্তী জিআর ২৪৩ নম্বর মামলায় জব্দকৃত আলামতের সিআইডি ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ভুক্তভোগীর পরিধান করা পোশাকে পুরুষের ডিএনএ শনাক্ত করে। যা আসামী নাসিরের ডিএনএ্রর সাথে ম্যাচ করেছে। অনুসন্ধান ও সরেজমিন জানা যায়, পরিবার ঘটনাটি জানার দিন আসামী নাসির খান দ্রুত পালাতে গিয়ে নিজের গেঞ্জি ও জুতা ভুক্তভোগীর ঘরেই রেখে যায়। এরপরে স্থানীয় ভাবে বিয়ের কথা দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা করতে বাধা দেয় নাসির। একপর্যায়ে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করে। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি পলাতক থাকাকালীন সময় এবং পরবর্তীতে হাজতে থাকাকালীন সময়ে তিনি ছুটি ভোগ করেন। দীর্ঘএই সময় তার ছুটি মঞ্জুরও করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা (ডাঃ পি.কে সাহা) কাছে আইনানুযায়ী সাসপেন্ড টার্মিনালের আবেদন করলেও তিনি সেটি আমলে নেয়নি। ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। আদালতে দাখিল করা চার্জশীটেও বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবুও বহাল তবিয়তে হাসপাতালের দায়িত্বে বহাল আছে প্রভাবশালী সরকারি কর্মচারী নাসির খান। এদিকে চার্জশীট দাখিলের পরে তার ভীতিকর প্রভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভোগী তরুণীর বোন ও তার মা বলেন, আমরা অনেক আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত আসামীর শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন ও সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। আসামী নাসির খান বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। আমি এমন কোনো অন্যায় কাজ করিনি। তারা আমাকে ফাঁসাতে এই অভিযোগ তুলেছে। ফরেনসিক রিপোর্ট টাকা দিয়ে আনা হয়ে বলে দাবি করেন তিনি। তবে জেলে থাকাকালীন ছুটি ভোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। মামলার তদন্ত কারি কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এজাহারের সাক্ষী ছাড়াও স্থানীয় পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ ও জব্দকৃত আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষায় বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে প্রতারণা মূলক শারিরীক সম্পর্ক করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পত্র দাখিলের সময় পর্যন্ত তিনি জামিনে ছিলেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহা ওরফে পি.কে সাহা, বলেন, তিনিওঔ ততকালীন সময় অর্জিত ছুটি ভোগ করেছে, জেল ঘেটেছে সেটা আমি জানতাম না। তাছাড়া আদালত বা থানা থেকে তার বিরুদ্ধে চার্জশীট হওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। স্টাফ সাসপেন্ড করার ক্ষমতা রাখেন সিভিল সার্জন বলে জানান তিনি