বরিশালে ছাদে প্লাস্টিকের বোতলে ধান চাষে সফলতা
ছাদের ওপর ধান চাষের বিষয়টি বেখাপ্পা মনে হলেও কাজটি সফলভাবে করে দেখিয়েছেন ডা. নাফিসা জাহান। শখের বশে নিজ কর্মস্থলের ভবনের ছাদে আখের পর এবার ধান চাষ করে আলোড়ন তুলেছেন বরিশাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এলাইড সায়েন্সেসের (ইনমাস) পরিচালক ডা. নাফিসা জাহান।
চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা শখের বশেই নিজেদের ভবনের ছাদে প্লাস্টিকের বোতলে উৎকৃষ্টমানের কালিজিরা জাতের চিনিগুড়া ধানের পরীক্ষামূলক চাষ করে প্রথমবারেই সফলতার মুখ দেখেছেন। ছাদে ধান চাষ আর এ সাফল্যে বেজায় খুশি বরিশালের উদ্যোক্তারাও।
বরিশাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এলাইড সায়েন্স ভবনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫ শতাধিকের বেশি তেলের বোতলে রোপণ করা ধান গাছের প্রতিটি থোকায় ঝুলছে ধান। আর সেই ধান থেকে প্রায় ৫০ কেজি চাল পাবেন বলে আশা করেন ডা. নাফিসা জাহান ও বাগানের মালি আনোয়ার হোসেন।
বাগানের মালি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছাদে কিছু মাটি ছিল। মাটিগুলো কোথাও না ফেলে চিন্তা করেছি বোতলে কিছু ধান চাষ করার। তখন পরিচালকের অনুমতি ও পরামর্শ নিয়ে ফেলে দেওয়া তেলের বোতল কেটে ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত নিই। পরে মাত্র ১ কেজি ধানের বীজ থেকে প্লাস্টিকের ৫ শতাধিকের বেশি বোতলে ধান রোপণ করি। এখন গাছের প্রতিটি থোকায় ধান এসেছে। এতে প্রায় ৫০ কেজি চাল পাওয়া যাবে।’
আনোয়ার আরও বলেন, ‘ক্ষেতে ধান চাষ করতে হলে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। ছাদে ধান চাষ করতে মাত্র একটি কাঁচি ব্যবহার করেছি। এ ছাড়া কোনো সরঞ্জাম লাগেনি। ছাদে ধান চাষের বিষয়টি এখন কোনো অংশে খারাপ লাগছে না। ফুল-ফলের থেকেও বাগানটি দেখতে ভালো লাগছে। ছাদে ধান চাষ একটি অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আধুনিক পদ্ধতিতে ছাদের ওপর রোপিত সুগন্ধি কালিজিরা পাকা ধান কাটা হবে।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন আল মাহাবুব বলেন, ‘মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশকে ভালো রাখতে ছাদ বাগানে ফুল, ফল ও সবজির চাষাবাদ করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নাফিসা জাহান। ছাদে ধান চাষের খবর ছড়িয়ে পড়লে সবাই দেখতে আসছেন।’
ইনমাস বরিশালের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও পরিচালক ডা. নাফিসা জাহান বলেন, ‘ছাদে এত বড় পরিসরে ধান চাষের কথা দেশের অন্য কোথাও শুনিনি। দু’একটা শখ করে লাগাতে পারে। তবে এতগুলো চাড়া বা ছাদের ওপর এতবড় ধানক্ষেত করার সাহস কেউই করেননি।’
তিনি বলেন, ‘এত বড় উদ্যোগের পুরো কৃতিত্ব বাগান পরিচর্যাকারীদের। দুই ও পাঁচ লিটারের পানির এবং তেলের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে ধানের চারা রোপণে। প্রতিটি বোতলের কাটা অংশে তিন থেকে চারটা করে চারা বসানো হয়েছে।’