বরিশালে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর

এ.এ.এম হৃদয় | ১৯:৪৫, নভেম্বর ১০ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে ভরাট বাণিজ্য চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন নিরবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জলাশয় ও পুকুর। জমি থেকে বালু উত্তোলন করে এভাবে দিনের পর দিন ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের আন্ধিরপাড় এলাকায় একটি পুকুর ভরাট করছে ড্রেজার ব্যবসায়ী বিপ্লব। অন্য একটি পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করে ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট করা হচ্ছে ঐ পুকুর। ড্রেজারে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের হুমকি ধমকির সামনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এভাবে ড্রেজার দিয়ে পুকুর ভরাট করা হলে এক সময় আমরা মাছ চাষের পুকুর খুঁজে পাবো না। এ ভরাট করার বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই! বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন- পরিবেশ আইন অনুযায়ী জলাশয়, পুকুর ভরাট সম্পূর্নরুপে নিষিদ্ধ। সুতারং পুকুর ভরাটের সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকুক, তারা বেআইনীভাবে কাজ করছেন। এ বিষয়টির খবর পেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিক্নন বায়েন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো দপ্তর যদি সরকারি কাজে নিজস্ব পুকুর ভরাট করতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পুকুর ভরাটের একটি প্রস্তাব পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারামতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী বিপ্লবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান, পুকুর ভরাট কোনভাবেই করা যাবে না। এটা আইনগতভাবে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এখন জানলাম। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে তদন্ত সাপেক্ষে। এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাববু্ব উল্লাহ মজুমদার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।