পটুয়াখালীতে সালিশ বৈঠকে মারধরে বৃদ্ধর মৃত্যু
পটুয়াখালীর দশমিনায় সালিশদের মারধরে এক বৃদ্ধর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৭০)। রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের নেহালগঞ্জ গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, নিহত নুরুল ইসলাম হাওলাদারের বখাটে ছেলে শহিদুল হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে তার বাবার কাছে বাড়ি করার জন্য জমি লিখে দেওয়ার বায়না ধরেন। বাবা নুরুল ইসলাম জমি দিতে অস্বীকার করলে স্থানীয় বহরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য রাকিবুল হাসান সোহাগ, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রহিম বেপারী, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক মো. কাইয়ুম গাজীর কাছে বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ছেলে সহিদুল হাওলাদার। অভিযোগের বিষয়ে নেতারা নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে সালিশ বৈঠকে বসার জন্য চাপ দেয়। এতে নুরুল ইসলাম রাজি না হওয়ায় বিএনপি নেতারা উত্তেজিত হয়ে নুরুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি লাথি-কিল-ঘুুসি মারতে থাকেন। এসময় তাদের হামলা থেকে বাঁচতে বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম পাশের ডোবায় ঝাপ দিলে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম গাজী তাকে পানির ভেতরে চেপে ধরেন। পানি থেকে উপরে তোলার পরে নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
নিহত নুরুল ইসলামের ছোট ভাই রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, ‘নেতাদের মাইর সইতে না পেরে পাশের ডোবায় ঝাপ দেন। সেখানেও রক্ষা হয়নি, তাকে চুবিয়ে ধরেন। পরে ভাইয়ের দেহ টেনে তোলার পর দেখি তিনি কোন শব্দ করেন না, তখন আমি চিৎকার করি আমার ভাইকে মাইরা ফালাইছে, এ সময় নেতারা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। সালিসির নামে নেতারা আমার ভাইকে পিটিয়ে মারছে।
নিহত নুরুল ইসলামের দুই ছেলের বৌ সামোথী বেগম ও চাঁদনী বেগম জানান, ‘বিএনপি নেতারা সবাই মিলে আমার শ^শুরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত ডা. রাহুল বিন হালিম জানান, ‘নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন তাকে মারধর করা হয়েছিল।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বহরমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ মঞ্জু রাঢ়ী জানান, ‘আমাকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএনপি নেতারা নুরুল ইসলামকে ডেকে আনতে বলেন, আমি তাকে ডাকতে গেলে তিনি আসবেন না বলে জানিয়ে দেয়। এসময় বিএনপি নেতা সোহাগ মেম্বার তাকে হাত ধরে ঘর থেকে টেনে নিয়ে আসেন এবং মারধর করেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওই বিএনপি নেতাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম শানু বলেন, আমি উপজেলা বিএনপি অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম, কয়েকজন আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। শালিস বৈঠক না করার জন্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ ছিল। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তার দায় বিএনপি নেবে না। তবে বিএনপির কোন নেতা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দশমিনা থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুল আলিম জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়া চলছে।’