নিষেধাজ্ঞা শেষ রোববার: সাগরে যাওয়ার শেষ প্রস্তুতি জেলেদের

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৯, নভেম্বর ০২ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ট্রলারে‌ জাল টানছেন, কেউ ট্রলারে তেল‌ উঠাচ্ছেন, কেউ বাজার থেকে খাবারসহ নিত্যপণ্য আনছেন, কেউ আবার সকল কাজ শেষে ট্রলারের ধোঁয়া-মোছার কাজ করছেন। ‌ কথা বলার সময় নেই এখন‌ কারো কাছে। সবার মুখে হাসি, আশায় বুক বেঁধে সাগরে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন জেলেরা। এমন কর্মযজ্ঞ চলছে বরগুনার পাথরঘাটাসহ উপকূলে। সরেজমিন বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার সময় প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়। আগামীকাল মধ্যরাত থেকে নদীতে-সাগরে নৌকা ভাসাবেন জেলেরা। নোয়াখালী থেকে এসেছেন পাথরঘাটার টিপু খানের মালিকানা এফবি সাইফ-৩ ট্রলারের মাঝি কামাল হোসেন। কথা হয় তার সঙ্গে। কামাল মাঝি বলেন, ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থেকেছি। আমরা আশাবাদী এবার সাগরে মাছ বেশি পাব। এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের মাঝি আলী হোসেন ট্রলারে জাল টানছেন আর বলছেন, ভাই কথা কওয়ার এহন সময় নাই। জাল টানছি ট্রলারে। এহনো বাজার সদায় করা বাকি আছে। রোববার রাইত ১২টার পর সাগরে রওয়ানা হমু। ‌ জেলে গিয়াসউদ্দিন, আকরাম, আহের উদ্দিন বলেন,মাইয়া পোলারে কইয়া আইছি সাগরে যামু, এহন ট্রলারের কাজ করি, এহনো বাজার সদায় সহ ট্রলারের অন্যান্য কাজ বাকি আছে। বাড়ি যাওয়ার আর সময় পামু না, হেই জন্য বাড়ির সবাইরে কইয়া আইছি। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের ইতোমধ্যেই প্রায় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কাজ‌ বাকি আছে। আমাদের জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মানছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষেই সাগরে‌ যাবেন তারা। উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, জেলেদের দুঃখ কেউ বুঝে না বা বুঝার চেষ্টাও করে না। জেলেদের সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় সহায়তা বিতরণে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন বিপদে পড়ে। তিনি আরও বলেন, জেলেদের খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবিকায়ন সচল রাখার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত জেলেদের ‘নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের আর্থিক সহায়তা নীতিমালা- ২০১৯’ রয়েছে। এতে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত-জলদস্যুদের হামলায় নিহত বা নিখোঁজ নিবন্ধিত জেলের পরিবারকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং একই ধরনের কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সহায়তার বিষয়টি অধিকাংশ জেলেই জানেন না। প্রচার-প্রচারণা নেই। এছাড়া আবেদন করেও সহায়তা পাননি অনেকেই। জেলেদের আর্থিক সহায়তা নীতিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন। সহায়তা বাড়ানো দরকার, প্রচার প্রচারণা, জেলে‌ পল্লীতে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকসহ প্রাপ্যতা এবং অধিকারের বিষয় সচেতনতা বাড়ানো দরকার। তাহলে মৃত জেলেদের দায়-দেনা পরিশোধসহ সঞ্চিত টাকা পরিবারের কাজে আসবে। পাথরঘাটা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনেছে। সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী জেলেদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে জেলেদের তুলনায় বরাদ্দ কম। বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।