কমিটিতে স্থান পেতে হত্যা-মাদক মামলার আসামীদের তোড়জোড়

এ.এ.এম হৃদয় | ১৯:০৬, অক্টোবর ১৬ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থায় মসজিদ পরিচালনা কমিটি মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য অংশ। মসজিদের যথাযথ ব্যবহার, মসজিদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও উন্নতি ইত্যাদি বহুলাংশে নির্ভর করে মসজিদ কমিটির যোগ্যতা ও সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মসজিদের কমিটিতে স্থান নিয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তি-বর্গ। ঠিক তেমনি বরিশাল নগরীর ষ্টিমারঘাট মসজিদ পরিচালনায় কমিটিতে স্থান নিতে হত্যা-মাদক মামলার আসামীদের তোরজোর দেখা গেছে। এসব বির্তকিত ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন করে কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছে সুযোগ সন্ধানী একটি চক্র। এ নিয়ে মুসুল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের মুসুল্লিরা জানান, মসজিদ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মসজিদের দোতলায় একটি সভা হয়। সভায় সিদ্বান্ত নেয়া হয় মুসুল্লি এবং মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট দোকান মালিকদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সেই সিদ্বান্ত অনুযায়ী ১৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি ও ২২ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবিত ওই কমিটিতে নগরীর আলোচিত শিরীন হত্যা মামলার একাধীক আসামী এবং বরিশাল ক্লাব রোড থেকে বিদেশী মদসহ আটক হওয়া কারাভোগকারী ব্যক্তিদের নামের তালিকা দেখা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় মুসুল্লিদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিতর্কিত ওই সকল ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মসজিদ সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে চিহিৃত অপরাধীদের নিয়ে করা কমিটি সাধারন মুসুল্লিরা মেনে নেবে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতেই তারা প্রস্তাবিত এই কমিটিতে নিজেদের নাম দিয়েছে। বস্তুত ব্যক্তিস্বার্থ, আর্থিক বিষয় ও পদ-পদবির জন্য এসব অযোগ্যরা সিন্ডিকেট করে কমিটিতে নিজেদের নাম লিখিয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে মুসুল্লি ও ষ্টিমারঘাট দোকান মালিক-কর্মচারীদেরকে কমিটি নিয়ে ভুল তথ্য ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত ধর্মপ্রান মুসল্লীরা যাতে মসজিদ কমিটিতে স্থান পায় সে বিষয়ে জোর দাবী জানিয়েছে স্থানীয় মুসুল্লিরা। এ বিষয়ে তারা আরো জানান, অধিকাংশ মসজিদে শিরক বিদ‘আত চালু থাকার অন্যতম কারণ হল, অযোগ্য লোকদের দ্বারা মসজিদ পরিচালিত হওয়া। এমনকি সূদখোর, ঘুষখোর, নিয়মিত ছালাত আদায় করে না এমন ব্যক্তিও মসজিদ কমিটির সদস্য হয়। এ সমস্ত নির্লজ্জ ব্যক্তিরাই আবার এই পদের জন্য বেশী লালায়িত। তাদের মুখে দাড়ি পর্যন্ত থাকে না। অনেকে বিড়ি, সিগারেট ও মদখোরও আছে। তারা যা ইচ্ছা তাই করে। সমাজের লোকদের কাছে এ সমস্ত দুর্নীতিবাজ ও ক্রিমিনালদের কোন মর্যাদা নেই। মসজিদের কমিটিতে তাদের আসার প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল জানান, মসজিদ কমিটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। যে কারও হাতে এ দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া ঠিক না। তাই কাউকে মসজিদ কমিটির জন্য বাছাই করার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হওয়া দরকার মসজিদ কমিটির দায়িত্ব নেয়ার মতো যোগ্যতা তার আছে কি-না। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার জুম্মাবাদ কমিটি গঠন করা হবে। সেজন্য আমরা মুসুল্লিরা সকালে একটি সভা করে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। তিনি আরো বলেন, প্রায়ই দেখা যায়, কেউ কেউ মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে আসতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। বস্তুত মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ, আর্থিক বিষয়, পদ-পদবির বিষয় গুরুত্ব না দিয়ে ইসলামের নির্দেশনা আমার কাছে প্রধান্য বিষয়। আমি ইসলামের নীতি আদর্শ মেনেই স্থানীয় মুসুল্লিদের মতামত নিয়ে সুন্দর একটি কমিটি গঠন করবো। এ বিষয়ে ষ্টিমারঘাট জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ মোঃ সিহাব বলেন, মসজিদের পুর্নাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি। তবে কিছুদিন আগে স্থানীয় মুসুল্লিদের সমম্বয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে সভাপতি এবং ইঞ্জিঃ আবু সালেহকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। এখনই তারাই পরবর্তীতে মসজিদের একটি পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। তবে মসজিদের কমিটিতে বিতর্কিত কোন ব্যক্তির স্থান হবেনা।