আত্মগোপনে চরফ্যাশনের ২০ ইউপি চেয়ারম্যান, দুর্ভোগে জনসাধারণ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২০ জন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ওই সব ইউনিয়নের সেবা প্রত্যাশীরা।
সোমবার উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে দেখা গেছে, চরমানিকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাসেল তার বাড়ির কাছে ইউনিয়ন পরিষদ থাকায় তিনি কার্যালয়ে এসে দাফতরিক কাজ পরিচালনা করছেন। তবে, পরিষদ কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি ওসমানাগঞ্জের চেয়ারম্যান কাসেম মোল্লা, আসলামপুরর চেয়ারম্যান কাসেম মেলেটারি, চরমাদরাজের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই, ওমরপুরের চেয়ারম্যান একেএম সিরাজুল ইসলাম, জিন্নাগড়ের চেয়ারম্যান মো: হোসেন মিয়া, আমিনাবাদের চেয়ারম্যান মো: সায়েদুর রহমান (মিঠু), নূরাবাদের চেয়ারম্যান আনোয়ার, আহম্মদপুরের চেয়ারম্যান ফখরুল, চরকলমির চেয়ারম্যান মো: কাউছার, হাজারীগঞ্জের চেয়ারম্যান মো: সেলিম হাওলাদার, রসুলপুরের চেয়ারম্যান মো: জহিরুল ইসলাম পন্ডিত, চর কুকরীমুকরীর চেয়ারম্যান মো: আবুল হাসেম মহাজন, এওয়াজপুরের চেয়ারম্যান মো: মাহাবুব আলম খোকন, জাহানপুরের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন হাওলাদার, অধ্যক্ষ নজরুল নগরের চেয়ারম্যান মো: রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিব নগরের চেয়ারম্যান মো: আবদুল ওয়াদুদ মিয়া, আবু বকরপুরের চেয়ারম্যান মো: সিরাজ জমাদ্দার, আবদুল্লাপুরের চেয়ারম্যান মো: আল এমরান প্রিন্স এবং ঢালচরের চেয়ারম্যান মো: আব্দুস সালাম হাওলাদার।
এদের মধ্যে নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখনের কার্যালয় গেলেও গতকাল রোববার তার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা করলে তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। অন্যদিকে আবু বকরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ জমাদার জনতার হাতে গণপিটুনি খেয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
অন্য চেয়ারম্যানরা হামলা, মামলার ভয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যালয় ছাড়ার ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও কার্যালয়ে আসেননি। এ সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কক্ষ তালাবদ্ধ, শুধু সচিব ও ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা অফিস করছেন নিয়মিত। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সনদের আবেদন করেও চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর না থাকায় প্রয়োজনীয় সনদ পাচ্ছেন না। এতে করে তাদের জরুরি দাফতরিক কাজে ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান গত ১৪ ও ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাক্ষর করে জনসাধারণকে সেবা দিয়েছেন। এছাড়াও ১৫ আগস্ট দুপুর বেলা আবুবকরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদারকে জনতা আটক করে জুতার মালা পড়িয়ে রাস্তায় ঘোরান। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য ইউপি চেয়ারম্যানরা সন্মানের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত জনগণ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন দেখা মিলছে না চেয়ারম্যানদের অফিসে আছেন শুধু সচিব এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। সেবা বঞ্চিত জনগণ প্রশাসনিক নিকট দাবি করেন যে তাদের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।
এ সময় নাগরিক সনদ নিতে আসা নূরউদ্দিন, ও সালমা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নিজেদের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে চেয়ারম্যানরা অফিসে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয় ও বাড়ি ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। নিজেদের প্রয়োজনে কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। সকল ইউনিয়নেও একই অবস্থা। দায়িত্ব পালনের ভয় পেলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা কেন দিচ্ছে না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন এলাকাবাসী।
ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে জন্মনিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স করতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানায় কয়েক দিন ধরে তারা ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন আর ফিরে যাচ্ছেন তবুও চেয়ারম্যান ও মেম্বারের দেখা পাচ্ছেন না।এ সময় স্থানীয় জনসাধারণ অভিযোগ করে বলেন, ‘গত সোমবার দুপুরের পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের খুঁজে পাওয়া যায় না। লোকজন প্রতিদিন এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে অপেক্ষা করেও সেবা পাচ্ছে না।
নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। এরপর আস্তে আস্তে যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে তখন থেকে কার্যালয়ে ফিরেছি। কিন্তু গতকাল আমার বসত বাড়িতে হামলা হওয়ায় এখন আমি ঢাকায় চলে আসছি।’
চরমানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে আমার এলাকার জনগণ কঠিন এক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তাই আমি সব সময় জনগণকে সেবা দিতে প্রস্তুত থাকি এবং নিয়মিত অফিস করে যাচ্ছি।’ তিনি প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের সহযোগিতা চেয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আবু সালেক মুহীদ সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকারের কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।