বন্যা ইস্যুতে ভারতের হাইকমিশনারকে ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:২৪, আগস্ট ২২ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : আকস্মিক বন্যায় দেশের আট জেলা এখন পানির নীচে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ভারত ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যার বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকেছিলেন। এদিকে, ভারতের বাধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যার বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি বাস্তব সম্মত নয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ভারত নদ-নদীর পানি প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত নিয়মিতভাবে দিলেও তাদের বাঁধ খুলে দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত কখনই দেয় না। বাঁধ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ অনেক আগেই ভারতকে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ভারতীয় হাইকমিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে জানায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সৌজন্য সাক্ষত করেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। সাক্ষাতে দুইদেশের মানুষের শান্তি, প্রগতি এবং উন্নয়নের জন্য হাইকমিশনার ভারতের অঙ্গিকার পুর্নব্যক্ত করেন। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় হাইকমিশারকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ভারত ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াযর আগে বাংলাদেশকে সতর্ক বার্তা দিতে পারত। তাহলে বাংলাদেশ আগে থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারত। জনজীবনের ভোগান্তি এবং ক্ষয়-ক্ষতিও লাঘব করা যেত। এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় বৈঠক করেন অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। বৈঠক শেষে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই ভারত বাঁধ খুলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে বন্যার কারণ জানতে চাওয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সাংবাদিকদের বলেন, বন্যা আকস্মিকভাবেই হয়েছে বলে ধারণা করছি। ভারত বাঁধ খুলে দিয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে। এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ভারত পানি ছেড়েছে বলে যা শোনা যাচ্ছে, সেটার তথ্য আমাদের কাছে নেই। সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে। ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করবেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান দৈনক সময়ের আলোকে বলেন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ এবং সমাঝোতা রয়েছে।যার আওতায় আমরা নিয়মিতভাবেই ভারত থেকে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রবাহের (বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া সংক্রান্ত) তথ্য-উপাত্ত পেয়ে থাকি। তবে ভারত তাদের বাঁধ খুলে দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আমাদের দেয় না। ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যাতে বাংলাদেশ আগে থেকেই পায় এজন্য নয়াদিল্লিকে ঢাকার পক্ষ থেকে অনেক আগেই প্রস্তাব দেওয়া আছে। আশা করি যে সামনে ভারত বাঁধ খুলে দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তও দিবে। তিনি আরো বলেন, এই সময়ের আকস্মিক বন্যার মূল কারণ হচ্ছে অতি ভারী বৃষ্টিপাত, লঘুচাপ, মৌসুমি বায়ু এবং সাগরে জোয়ার। খুব দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমা করছি। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীতে ভারতীয় বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’ শীর্ষক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখেছি যে ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যার বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবে এটি সঠিক নয়। আমরা উল্লেখ করতে চাই যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে এই বন্যা মূলত বাঁধের ভাটির দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে ঘটেছে। ডাম্বুর বাঁধটি সীমান্ত থেকে বেশ দূরে – বাংলাদেশের ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি উজানে অবস্থিত। এটি একটি স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে একটি গ্রিডে পাঠায় এবং সেখান থেকে বাংলাদেশও ত্রিপুরা থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তি গ্রহণ করে। প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীপথে অমরপুর, সোনামুড়া ও সোনামুরা ২-এ তিনটি স্থানে আমাদের জলস্তর পর্যবেক্ষণ সাইট রয়েছে। সমগ্র ত্রিপুরা ও এর পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ২১ আগস্ট থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ভারী প্রবাহের এই ঘটনায়, পানির স্বয়ংক্রিয় মুক্তকরণ পরিলক্ষিত হয়েছে। অমরপুর স্টেশন একটি দ্বিপাক্ষিক প্রটোকলের অংশ যার অধীনে আমরা বাংলাদেশে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য প্রেরণ করছি। ২১/০৮/২০২৪ তারিখে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশে সরবরাহকৃত তথ্যে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টায়, বন্যার কারণে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটার ফলে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়। তবুও, আমরা জরুরি ভিত্তিতে তথ্য পাঠানোর জন্য তৈরি অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদীতে বন্যা একটি যৌথ সমস্যা যা উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানের জন্য ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। যেহেতু দুটি দেশের ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি-বিষয়ক সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানি সম্পদ ও নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগসমূহের সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।